নাভিদকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি আত্মহত্যা? রামেক হাসপাতালের চার স্তরের নিরাপত্তা কার জন্য?

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে পালিয়ে যাওয়া অগ্নিদগ্ধ এক কিশোরের লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে ঐহিতাসিক মাদ্রাসামাঠ সংলগ্ন নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে শরীরে ব্যান্ডেজ জড়ানো লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পরপরই এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য দিয়েছেন মারা যাওয়া কিশোর নাভিদ ইসলাম (১৫) এর মা রিতা বেগম। কিন্তু আদৌ কি এটা আত্মহত্যা? আর হাসপাতালের চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে কিভাবে ওই কিশোর বাইরে বের হলো? এ ঘটনার পর অস্বাভাবিক কিছু তথ্য এমন নানা প্রশ্নের তৈরি করেছে।

রামেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত কিশোর নাভিদ ইসলাম মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার খাদেমুল ইসলামের ছেলে। কয়েক বছর আগে তার মা রিতা বেগমের সঙ্গে বাবার ডিভোর্স হয়। এরপর থেকে নাভিদ মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। নাভিদের মায়ের দাবি, নাভিদ মানসিক ভারসাম্যহীন। গত ২ ফেব্রুয়ারি নিজে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রিতা বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, নাভিদ কেন জানি বাঁচতে চাইতো না। ছেলের মাথায় সব সময় আত্মহত্যার চিন্তা কাজ করতো। তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। কিছুদিন আগে সে নিজের শরীরে নিজেই আগুন দেয়। এভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর পর তাকে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে তিনি ওয়াশরুমে গেলে এ সুযোগে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় নাভিদ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায় নি। পরে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর থেকে তার ছেলের মরদেহ উদ্ধারের খবর পান।

তথ্য বলছে, হাসপাতালে ভর্তির সময় নাভিদের ১৮ শতাংশ বার্ন ছিলো। শ^াসনালি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ডাক্তার নাভিদকে ঢাকায় রেভার্ড করে। কিন্তু তার মা ঢাকায় নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। শেষে এখানেই রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই তার চিকিৎসা হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলো নাভিদ।

বার্ন ইউনিটের অন্য রোগীর স্বজন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাভিদের মা তাকে নির্যাতন করতেন। যা নিয়ে বিরক্ত ছিলেন অন্য রোগীর স্বজনরাও। এরমধ্যে নাভিদের এমন মৃত্যু ঘিরে রহস্যের জন্ম নিয়েছে।

সোমবার উদ্ধারের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেয়া হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক।

তিনি আরও জানান, রামেক হাসপাতালে পুলিশ থাকলেও মাত্র ৪ জন সদস্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য থাকে। ওইখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। আর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে নাভিদ হাসপাতাল থেকে একাই বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। তবে যে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার আশেপাশে কোন সিসিটিভি ফুটেজ নেই। সুতরাং হত্যা না কি আত্মহত্যা তা এখনই বলা সম্ভব না। আর নাভিদ মানসিক ভারসাম্যহীন কি না? সেটা জানা যায় নি। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, রাজশাহী মেডিকেলে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ রোগী ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে। সবাইকে ওইভাবে বোঝার সুযোগ থাকে না। আর ওই ছেলে ৭ টা ২২ এ হাসপাতাল ত্যাগ করেছে। সিসিটিভি ফুটেজে এটা দেখা গেছে। আর নাভিদ আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং সে মানসিক ভারসাম্যহীন এটা আমাদেরকে তার মা জানায় নি। জানালে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিতেন। তবে ওই ওয়ার্ডের অন্যরোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, নাভিদের মা হাসপাতালেও তার উপর নির্যাতন চালাতো।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ