সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বর্তমানে ১৯ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১২ জন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্র জানা যায়, হঠাৎ করেই বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা। আর অধিকাংশই আসছেন পাবনার রূপপুর ও ঢাকা থেকে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯ জন। মঙ্গলবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১০ রোগী।
জশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের ৪টি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ১৯ জন চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে ১ জন আইসিইউতে রয়েছেন। বাকিদের অবস্থা উন্নতির দিকে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আক্রান্তরা বেশির ভাগ পাবনা জেলার বাসিন্দা। তারা সবাই সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে এসেছেন। তবে রাজশাহী মহানগরের বাসিন্দাদের এখন পর্যন্ত কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হননি। এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন বলে জানান রামেক হাসপাতালের পরিচালক।
এদিকে ঢাকার এভারকেয়ার হসপিটালের মেডিক্যাল সার্ভিসেসর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ সময় টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, হঠাৎ করেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং হাসপাতালে ভর্তির পেছনে অন্যতম কারণ হলো আবহাওয়ার তারতম্য, সেই সাথে মুষলধারে বৃষ্টি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশার বংশবিস্তার রোধের সঠিক ব্যবস্থা না নেয়া এবং সর্বোপরি সচেতনতার অভাব।
সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তার বেশি ঘটে। এ সময়টাকে তাই ডেঙ্গু মৌসুমও বলা হয়। ডেঙ্গু জ্বরে সময়মতো চিকিৎসা করানো না হলে অনেক সময় সেটা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে শিশুদের প্রতি বেশি সচেতন হতে হবে।
কী করে বুঝবেন আপনার ডেঙ্গু হয়েছে-
ডেঙ্গু আসলে একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যেটা এডিস মশার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণতো ৪-১০ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ বোঝা যায়। যার কারণে জটিলতাও বেশি হয়ে থাকে এবং রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, বুকে পেটে পানি আসে, যকৃত আক্রান্ত হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের-ক্লাসিক্যাল এবং হেমোরেজিক তবে বেশি তীব্র হলে সেটাকে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ বলে।
সাধারণতো ডেঙ্গু হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়:
ডেঙ্গু জ্বর হলে কী করবেন-
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগী সাধারণতো ৫-১০ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবে রোগী যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতায় না ভোগে সেজন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
এক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো মেনে চলা আবশ্যক:
ডেঙ্গু প্রতিরোধ আপনার করণীয়-
প্লাটিলেট কাঊন্ট নিয়ে উদ্বিগ্নতা –
ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমে যাওয়া এটা স্বাভাবিক বিষয় তাই এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছুই নেই। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অথবা রক্তের প্লাটিলেট যদি ১০,০০০ এর নিচে নেমে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনবোধে ফ্রেশ রক্ত অথবা প্লাটিলেট দেয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, সেই সাথে এডিস মশা নিধনে এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
সর্বোপরি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের নিজেকে এবং আমাদের আশপাশের মানুষকে সুস্থ রাখতে সক্ষম হব।