নিজস্ব প্রতিবেদক:উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। বিভাগীয় শহরের এই হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালমুক্ত করার ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থানে থাকলেও দালারা কৌশল বদল করে তাদের কাজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। এতে বিড়ম্বনা ও হয়রানিসহ ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ রোগী। দালালচক্র বেশ বেপরোয়া। সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হেনস্তা করে হত্যার হুমকিও দিয়েছে!
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১ টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে জরুরি বিভাগ, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চষে বেড়াচ্ছে দালাল সদস্যরা। নিজেকে হাসপাতালের ‘স্টাফ পরিচয়’ দিয়ে রোগিদের ফাঁদে ফেলছে এই চক্র। হাসপাতাল সংলগ্ন লক্ষ¥ীপুর এলাকার বেশ কয়েকজন ওষুধের দোকান মালিকসহ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোও এই দালালদের সহযোগিতা করছে।
এদিন প্রতিবেদক দালাল সিন্ডিকেট সদস্যদের ছবি তুললে নিজেকে ‘হাসপাতাল স্টাফ’ পরিচয় দিয়ে ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে দুই দালাল। ফোন ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে ফোনের ‘ছবি ডিলিট’ করতে কয়েকজন দালাল মিলে সাংবাদিককে হেনস্তা করে। এসময় হাসপাতালের বাইরে বের হলেই হত্যার হুমকি দেয় তারা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রতিবেদক আনসার সদস্যদের ফোন দিলে তারা পালিয়ে যায়।
এর কিছুক্ষণ পরে আরেকজন দালাল সদস্য আবারও ফিরে এসে নিজেদের ‘কথিত দুই সাংবাদিক’ এর কাছের লোক দাবি করে হাসপাতালের বাইরে বের হলেই ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দেয়।
এর কিছুক্ষণ পর প্রতিবেদক জরুরি বিভাগের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সামনে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এক দালাল সদস্য বার্ন আক্রান্ত এক রোগীর স্বজনকে ওষুধ কিনতে নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে যেতে বাধ্য করছে। পাশে সাংবাদিক টের পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় ওই দালাল।
রোগীর স্বজন আমেনা বেগম বলেন, আমি রোগী দেখতে এসেছি। ওই লোককে (দালাল) জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কোন দিকে। এরপর থেকে আমার পিছনে নিয়েছে। হাসপাতালের বাইরে ভালো চিকিৎসা হয় এমন নানা কথাবার্তা বলতে থাকে। সর্বশেষ ওষুধ লাগবে কি না জিজ্ঞেস করে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে তথ্য কর্মী হিসেবে কাজ করেন মোসা. সামিয়া আক্তার। তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালাল নিধনে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। কিন্তু গেট পেরুলেই দালালের ছড়াছড়ি। মাঝেমধ্যে ভেতরেও ঢুকে পড়ে। আনসার সদস্যরা বুঝতে পারলেই বের করে দেন।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ জানান, হাসপাতাল দালালমুক্ত করার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগের মতো দালাল আর নেই। কেউ দালাল এটা বুঝতে পারলেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও কিভাবে ঢুকে পড়ছে বিষয়টি দেখছি।