রাসিকের দেড়শ কোটি টাকার ‘অপ্রয়োজনীয়’ তিনটি প্রকল্প বাতিল

আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেওয়া অপ্রয়োজনীয় তিনটি প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সম্প্রতি রাসিকের সংশ্লিষ্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা যায়, সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিস্থলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটিকে অপ্রয়োজনীয় বলে সেটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। এর আওতায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, সমাধি কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি, অভ্যন্তরীণ নর্দমা, আলোকায়ন, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন, প্রবেশ ফটক, হাঁটাপথ ছিল। এছাড়া সমাধিস্থল পর্যন্ত ৩৫ মিটারের সড়ক নির্মাণেরও কথা ছিল। প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন হবে না বলে রাসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এছাড়া ভদ্রা রেলক্রসিং ফ্লাইওভার প্রকল্পটিও বাতিল করা হয়েছে। প্রকল্পটি গ্রহণের পর বাস্তবায়নের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি চাওয়া হয়েছিল। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকার করে। পরে প্রকল্পটির প্রকৃতি বদলে ভদ্রা রেলক্রসিংয়ে আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৫২০ মিটার দীর্ঘ আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়নি। রাসিকের সাম্প্রতিক সভায় এ প্রকল্পটিকেও অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাসিকের উদ্যোগে স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। নগরীর চকপাড়া এলাকায় ১৬৬ একর জমি উন্নয়ন করে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এজন্য রাসিক থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতিও শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। তবে রাসিকের সাম্প্রতিক সভায় স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন প্রকল্পটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা থেকে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা ছিল রাসিকের।

সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। তবে এরই মধ্যে প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।
রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন জানান, চলমান কিছু উন্নয়ন প্রকল্প তারা বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী। অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় তিনটি প্রকল্প না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রাসিকের দেওয়া তথ্যমতে, সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ওভারপাস বা ফ্লাইওভার ও ১৯টি ছোট-বড় অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এই ১৯টির মধ্যে তিনটি প্রকল্প ইতোমধ্যে বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া লেভেলক্রসিংয়ে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৫২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এই ফ্লাইওভারটির কাজ শুরু করেছিল নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে শহিদ কামারুজ্জামান চত্বর লেভেলক্রসিংয়ে ৮৯৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। মহানগরীর বর্ণালীসংলগ্ন বন্ধ গেট এবং নতুন বিলসিমলা লেভেলক্রসিং পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ সমন্বিত ওভারপাস নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় হচ্ছে ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বছরখানেক আগে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ছয় মাস আগে। এরই মধ্যে প্রকল্পগুলোর ১০ থেকে ১৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।

এদিকে ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে সরঞ্জাম নিয়ে চলে যাওয়ায় প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন নগরীর মানুষ। ইতোমধ্যে ফ্লাইওভার প্রকল্পগুলো বাতিলের জন্য নগরীতে কয়েক দফা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। ফ্লাইওভার প্রকল্পগুলোর কী হবে-তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না রাসিক কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, কিছু চলমান প্রকল্পের কাজ মাঝপথে বাতিল করলে এতে রাসিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবদিক বিবেচনা করেই প্রকল্পগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে রাসিকের বর্তমান কর্তৃপক্ষ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ