শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সরিফুল ইসলাম বাবু
দুই.
পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও পর্যটন উন্নয়ন, রাজশাহী মহানগরে মঠ, মন্দির, মসজিদ, শতবর্ষী স্কুল-কলেজ সহ বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হয়। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সিটি মিউজিয়াম তৈরির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন মিউজিয়াম পরিদর্শন করে মিউজিয়াম পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হয় এবং মিউজিয়াম গড়ে তোলার জন্য কিউরেটর নিয়োগ করা হয়। অস্থায়ীভাবে ঘর বরাদ্দ করা হয় এবং মহানগরবাসীর নিকট থেকে ছোট-বড় ঐতিহাসিক জিনিস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। রাজশাহীতে পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
শহিদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানকে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষনীয় করতে, উদ্যানটিকে সাজানোর জন্য
বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট নিয়োগ করে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। শুরু হয়, পর্যায়ক্রমে পরিকল্পিত উন্নয়ন, স্থাপন করা হয় দেশের সবচেয়ে উঁচু ফেরিজ হুইল, লেকের উপর সুদৃশ্য দুটি ঝুলন্ত ব্রিজ তৈরি করা হয়। পার্কের দর্শনীয় মেইনগেট, লেকের পাড় ম্যাট্রেসিং, সুদৃশ্য বাউন্ডারি ওয়াল, মানসম্মত পাখি ও জীবজন্তুর খাঁচা, পিকনিক স্পট, বসার বেঞ্চ, কার্ভস্টোন, সিরামিক ইট ইউনি ব্লক ও পাথর দিয়ে সম্পূর্ণ পার্কে রাস্তা ও ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ করা হয়।
প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ ( পিপিপি) এর মাধ্যমে কাজ করার কোন অভিজ্ঞতা রাজশাহীতে ছিলো না, সরকারি এই আইনের প্রয়োগ করে রাজশাহীতে ২০০৯ সালে ডেভলোপার নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এর ফলে যুগান্তকারী সাফল্যের দ্বার উম্মোচিত হয়। এই আইনে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কয়েকটি চুক্তি সম্পাদন করে। পরবর্তী লেখায় তার বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।
নগর উন্নয়ন অথোরিটি (আরডিএ)
আরডিাে এলাকায় হাইরাইজ ভবন আইন সংশোধন করা হয়। উল্লেখ্য আরডিএ এলাকায় ৮ তালার উপরে ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিতে পারতো না। সাবেক মেয়র লিটনের আন্তরিক উদ্যোগে ২০০৯ সালে এই আইন সংশোধন করার পর রাজশাহীতে হাইরাইজ ভবন তৈরির বাধা দুর হয়। ফলে ১৯৮২ সালে কাজীহাটায় সাধারণ বিমার ১০ তলা ভবন তৈরির পর ২০০৯ সাল থেকে রাজশাহীতে এখন ১০ তলা বা তার উপরে শতাধিক ভবন তৈরি সম্পন্ন হয়েছে বা কাজ চলছে। উর্দ্ধমুখি ভবন তৈরির ফলে দেশের ছোট বড় ডেভলপার রাজশাহীতে কাজ শুরু করে। ফলে ফ্লাট নির্মাণসহ বিপনি বিতান, অফিস, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে গতির সঞ্চার হয়। এর ফলে শিল্পায়ন, বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এসফল্ট প্লান্ট
রাজশাহী শহরে পিচ-পাথরের মানসম্মত রাস্তা নির্মাণ আধুনিক ইকুইপমেন্ট ছাড়া সম্ভব না। তাই রাস্তা নির্মাণের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয় এবং মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের সকল পিচের রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিপ্লব সাধিত হয়Ñ বন্ধ হয় পিচ পাথরের রাস্তা নির্মাণের ম্যানুয়াল পদ্ধতি। এতে রাস্তার স্থায়িত্বকাল বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। শহরের সিটি হাটের কাছে ২০১১ সালের ৭ জুলাই এ প্লান্টের ইকুইপমেন্ট সংরক্ষণের জন্য ভবন নির্মাণ করা হয়।
সিটিভবন নির্মাণ ও সোনাদিঘির উন্নয়ন
সোনাদিঘি পুরানো সিটি ভবন ভেঙ্গে, পিপিপি-এর আওতায় ১৬ তলা সিটি সেন্টার বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের লক্ষে ডেভলপার নিয়োগ করা হয়। মূল ভবনের ডেভলপার ৭৪.৭৫% এবং সিটি করপোরেশন ২৫.২৫% হিসেবে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী মূল ভবন এর সাথে ডেভলপারকে অতিরিক্ত নির্মাণ করতে হবে একটি মসজিদ,তথ্যপ্রযুক্তি পাঠাগার, এমপি থিয়েটার, ওয়ার্কওয়ে, ল্যান্ডস্কেপিং, দিঘির একপাশে গ্যালারি, দিঘির পাড় বাঁধানো, বৃক্ষরোপণ, লেকের পাশে বসার বেঞ্চ, সাবস্টেশন, জেনারেটর ও পাম্প হাউস। দিঘির দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ের বর্তমান মার্কেটের দোকানদারদের পুনর্বাসন, পয়ঃনিষ্কাসন, ভেতরের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচির ইত্যাদি নির্মাণ। এখন পর্যন্ত সিটি সেন্টার ভবনের ১২ তলা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভবনের প্রাপ্ত অংশ ডেভলপারকে পজিশন বিক্রয় করতে হবে এবং সিটি করপোরেশন তার প্রাপ্ত অংশ পজিশন বিক্রয় করার পর সম্পূর্ণ ভবনের ভাড়া সিটি করপোরেশন পেতে থাকবে। ফলে সিটি করপোরেশন এ ভবন থেকে প্রচুর অর্থ আয় করতে থাকবে। যা সিটি করপোরেশনের রাজস্ব খাতকে শক্তিশালী করবে।
(চলবে)
লেখক : সাবেক প্যানেল মেয়র -০১ রাসিক।