শিবগঞ্জে ১৬ বছর ধরে নিজ খরচে রাস্তা মেরামত ও গাছ লাগিয়ে আসছেন আমির

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ণ

 


শিবগঞ্জ প্রতিনিধি:‘আমার এলাকার মানুষ ভাল রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পারে এবং ক্লান্ত শরীরে গাছের নীচে বসে একটু বিশ্রাম নিতে পারে ও রাস্তা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় সে জন্য আমার নিজেরশ্রমের টাকা দিয়ে এ দুটি কাজ করছি। যতদিন বাঁচবো ততদিনই মানবসেবার জন্য এ কাজ করবো। এটাই আমার জীবনের পণ।’ কথাগুলো বললেন জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের মর্তুজা আলির ছেলে দিন মজুর আমির হোসেন।

শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে সরেজমিনে বিশ^নাথপুর মাঠে নিজ খরচে গাছ লাগানোর সময় তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, প্রায় ১৬ বছর থেকে এ দুটি কাজ করি। খুব আনন্দ পাই। তিনি জানান, ১৬ বছরে বিশ^নাথপুর মাঠের বিভিন্ন সড়কের পাশে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় পাঁচশো গাছ লাগিয়েছি এবং গ্রামের বিশ^নাথপুর ঘুনটোলা চৌকা নুরানী মাদ্রাসা পর্যন্ত আধা কিলোমিটার, চুনকিপাড়া হতে তেনাপড়া পর্যন্ত আধা কিলোমিটার, চামারপাড়া হতে বাংলাদেশ ও ভারতের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সহ প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করেছি। যে রাস্তাগুলি আগে চলাচলের অযোগ্য ছিল। তিনি আরো বলেন, ১৬ বছরে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

২০১৬ সালে আমার গ্রামের নাজিম মাস্টারের জমির পাশে প্রায় ১০ মিটার রাস্তায় কাদা- পানি জমে থাকায় নারীসহ পথিকের কষ্ট দেখে সে রাস্তাটুকু আমি নিজ খরচে মেরামত করি। সেখানে থেকে আমার যাত্রা শুরু। সরেজমিনে দেখা গেলো একদল লোক রাস্তা মেরামত করছে,যা দেখে মনে হবে সরকারি কাজ। কিন্তু শ্রমিক আখতারুল ও আলতাফ হোসেন সহ ৫/৬জন শ্রমিক জানান, আমরা আমির হোসেনের নির্দেশে কাজ করছি। তিনি আমাদের পারিশ্রমিক দেন। প্রায় ৯ মাস থেকে আমরা কাজ করছি।

তারা বলেন, আমির হোসেনও আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। তাছাড়াও তিনি নিজে বিভিন্ন এলাকায় কামলা খাটেন। তিনি অনেক দিন থেকে জন-সেবার উদ্দেশ্যে গাছ লাগান এবং রাস্তা মেরামত করেন। তার স্ত্রী মোসা. সুখী বেগম বলেন, আমার স্বামী আমির হোসেন নিজে একজন কামলা হয়েও সে কামলা খাটার অর্ধেক টাকা সংসারে খরচ করেন ও অর্ধেক টাকা জনসেবায় রাস্তার পাশে গাছ গালানো এবং রাস্তা মেরামতে খরচ করেন। নিজেও কামলা খেটে এসে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় কাজ করেন। বর্তমানে একটি এনজিও থেকে ১০ হাজার টাকা লোন নিয়ে রাস্তা মেরামতের খরচ করছেন।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সংস্থা থেকে অনেক টাকা লোন করা হয়েছে। বুঝে উঠতে পারছি না কী করবো! আগে নিষেধ করতাম, এখন আর করিনা। শ্বশুরের দেয়া একটি টিনের ঘরে তিনটি সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। বর্তমানে আমাদের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরার মত। দুটি সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল উসমান আলি. আনসার কমান্ডার মোহবুল হক, কৃষক কালাম, মিঠন আলি, প্রতিবন্ধী ভাল চালক সিরাজ উদ্দিন, বাবুল উদ্দিন, কৃষক জাহিরুদ্দিন সরকার মুরব্বী ও ৯নং ওয়াড সদস্য বাদশাহ সহ এলাকার অনেকে জানান, সীমান্তঘেঁষা এ মাঠে হাজার হাজার একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফলদ ও আম চাষ হয়।

সাম্প্রতিক কালেও এ রাস্তাগুলি দিয়ে যাতায়াত করতে পারিনি। ফসল ও আম বহন করে কঠিন কষ্ট করতে হয়েছে। কারণ রাস্তায় কাদা-পানি জমে থাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারতো না বিষয়টি বারবার ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাইনি। একমাত্র এলাকার আমির কামলা খেটে সেই টাকা দিয়ে রাস্তা মেরামত ও রাস্তার পাশে গাছ লাগিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তবে কিছু কিছু লোক তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এমনকি মিথ্যা মামলা দিয়ে দীর্ঘ সাত বছর ধরে তাকে হয়রানি করছে। আমরা তার ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিনোপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রুহুল আমীন বলেন, এধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ নিঃসন্দেহে গৌরবের। তার এ ধরনের কাজে আরো উৎসাহ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাছাড়া সব সময় তার পাশে থাকবো। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. উজ্জল হোসেন বলেন, এটি খুবই ভাল কাজ। তার খোঁজ খবর নিয়ে তাকে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করবো এবং সব ধরনের সহযোগিতা করবো।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রামানিক বলেন, নিঃসন্দেহে কাজটি অনেক প্রশংসার। আমরা তাকে উৎসাহ দিতে সহযোগিতা করে এমন ভালো কাজের সাথে থাকতে চাই।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ