রূপপুর প্রকল্পের গাড়ি চালকের মরদেহ উদ্ধার : বন্ধুর স্ত্রীর হত্যার দায় স্বীকার

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩, ১১:০০ অপরাহ্ণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:


নিখোঁজের দুইদিন পর ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী শিলাইদহ ঘাট এলাকা থেকে ঈশ্বরদীস্থ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের নিকিমত কোম্পানির গাড়িচালক সম্রাট হোসেন (২৯) এর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয় বিলাসবহুল প্রাডো জিপ গাড়িটি।
শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল ১১টায় তার মরদেহ উদ্ধার ও প্রাডো জিপ গাড়িটি জব্দ করা হয়। নিহত সম্রাট ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্য অরণকোলা আলহাজ্ব ক্যাম্প এলাকার বক্কার হোসেনের ছেলে।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত সম্রাটের বন্ধু একই উপজেলার বাঁশেরবাদা গ্রামের আব্দুল মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুন (৩০) কে আটক করেছে। তবে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন নিহত সম্রাটের বন্ধু মমিন।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) জিয়াউর রহমান জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রসাটমের নিকিমত কোম্পানীতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন সম্রাট হোসেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত আটটার দিকে সম্রাট তার পরিবারের সদস্যদের সাথে মোবাইলে কথা বলেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার খোঁজ না পেয়ে ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

শনিবার সকালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট এলাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি গাড়ি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাডো জিপের ভেতর থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনেরা গিয়ে মরদেহটি সম্রাটের বলে শনাক্ত করেন।

এর আগে বিভিন্ন সূত্রে ধরে পুলিশ ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার নিখোঁজ সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, সম্রাটের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে বন্ধু মমিন ও তার স্ত্রী সীমা মিলে সম্রাটকে হত্যা করেছেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদীপুর ইউপির গ্রাম পুলিশ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি দুইদিন ধরে একটি দামী গাড়ি শিলাইদহ নদীপাড়ে দাঁড় করানো আছে। গাড়িটির কাছে যাওয়ার পর মানুষ পঁচা গন্ধ বুঝতে পেরে মেম্বারসহ পুলিশ প্রশাসনকে জানাই।

সাদীপুর ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, গাড়ির অদূরে কলাবাগানে কাজ করার সময়ে একজন চাষি একটি চাবি পড়ে থাকতে দেখে আমার কাছে এগিয়ে আসেন। চাবিটি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটির হবে এমন ভেবে স্থানীয়দের সাথে করে দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা আনলক ছিল। দরজা খুলেই জুতাসহ পা দেখতে পেয়ে দরজা বন্ধ করে পুলিশে খবর দেই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রাডো গাড়ির মালিক আনিসুর রহমান বলেন, আমার কয়েকটি গাড়ি রূপপুর প্রকল্পে বিভিন্ন কোম্পানিতে ভাড়া দেয়া রয়েছে। তিন বছর ধরে সম্রাট আমার একটি গাড়ি চালায়। বৃহস্পতিবার রাতে ওকে ফোনে না পেয়ে খোঁজখবর শুরু করি। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেও তার কোন সন্ধান মেলাতে না পেরে সন্দেহ হয়। শুক্রবার সারারাত বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেওয়ার পর জানতে পারি আমার গাড়িটি শিলাইদহ ঘাট সংলগ্ন পাড়ে দাঁড় করানো আছে। পরে গিয়ে জানতে পারি গাড়িতেই ড্রাইভার সম্রাটের লাশ রয়েছে।

নিহত ড্রাইভার সম্রাটের বাবা আবু বক্কার বলেন, আমার ছেলে সম্রাট তার বন্ধু মমিন ও মমিনের স্ত্রী সীমাকে চাকরি দিয়েছিল। ইতোমধ্যে তাদের চাকরি চলে যায়। আবারও তাদের শ্রমিক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেয়। আমার ছেলে নিকিমত কোম্পানীতে কয়েকটি গাড়ি ভাড়াও দিয়েছিলো। প্রতি মাসে বড় অংকের টাকা বিল তুলতো। কৌশলে আমার ছেলেকে স্বামী-স্ত্রী ডেকে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছি। তিনি বলেন, আমার সন্তান হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

আটক মমিনের স্ত্রী সীমা পুলিশকে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্রাট আমার বাসায় আসে। আমাকে বলে তার মাথা ধরেছে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার স্বামী মমিন ওষুধ আনতে গেলে সম্রাট আমার শরীরে হাত দেয়। আমি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপানাঙ্গে আঘাত করলে সে মারা যায়। পরে আমার স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভরে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করার পর আমার স্বামী আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহে গাড়ি রেখে সটকে পড়ে।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, নিহত সম্রাটের পরিবার ও গাড়ির মালিকের তথ্যের ভিত্তিতে বাঁঁশেরবাদা এলাকায় মমিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে মমিনের স্ত্রী সীমাকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। পলাতক মমিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ