সোনার দেশ ডেস্ক :
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা বাংলাদেশের ২১ ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ সর্বশেষ তথ্য হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল কমিউনিকেশন ব্যুরো (এনসিবি) থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই ২১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বর্তমান বিচারিক ও প্রসিকিউশন অবস্থা হালনাগাদ করে দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে এসব তথ্য ইন্টারপোলের নোটিশ অ্যান্ড ডিফিউশন্স টাস্ক ফোর্স, আইপিএসজি-কে অবগত করা হবে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমান বলেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিশে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সবসময় তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
জানা গেছে, বর্তমানে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ জন সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। বাকি ১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক হলেও বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধ করায় সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের আবেদনের পর রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ২১ সন্ত্রাসীর তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে জারি হওয়া রেড নোটিশধারীদের বিষয়েও তথ্য হালনাগাদ করা হবে। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এই ২১ সন্ত্রাসীর নাম রেড নোটিশভুক্ত হয়।
রেড নোটিশধারীদের মধ্যে ২০০৫ সালে জাফর আহমেদ, হোসাইন নবী, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, রফিকুল ইসলাম, ত্রিমতি সুব্রত বাইন, জিসান, আমিনুর রসুল, আব্দুল জব্বার, ২০০৬ সালে চারন মিয়া, খোরশেদ আলম, শাহাদাত হোসেন, মিন্টু, তৌফিক আলম, নাসিরুদ্দিন রতন, আতাউর রহমান, ২০০৭ সালে সালাউদ্দিন মিন্টু, ২০১০ সালে কালা জাহাঙ্গীর ফেরদৌস, ২০১১ সালে নাঈম খান ইকরাম, ২০১৩ সালে শফিক উল্লাহ আমান, ২০১৬ সালে সদর উদ্দিন চান্দু ও ২০১৯ সালে ওয়াসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পুলিশ সদর দফতরের নথি অনুযায়ী, জাফর আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা, নবী হোসাইনের নামে ঢাকার মোহাম্মদপুর, কাফরুল, মিরপুর, গুলশান, ধানমন্ডি ও আদাবর থানায় মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। প্রকাশ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা, রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় দুটি মামলা, ত্রিমতি সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে মতিঝিল ও রমনা থানায় ১২টি মামলা রয়েছে।
জিসানের বিরুদ্ধে সবুজবাগ, খিলগাঁও, মিরপুর, রমনা ও মতিঝিল থানায় ৯টি মামলা, আমিনুর রসুল ওরফে টোকাই সাগরের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় দুটি, আব্দুল জব্বার ওরফে মুন্নার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি, চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় আটটি, খোরশেদ আলম রাসুর বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় ১৩টি, শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে মিরপুর, শাহআলী, পল্লবী, কাফরুল ও ধানমন্ডি থানায় ২৩টি, মিন্টুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় সাতটি মামলা রয়েছে।
এছাড়া তৌফিক আলমের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি ও মিপুর থানায় চারটি, নাসিরুদ্দিন রতনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ছয়টি, আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ১২টি মামলা, সালাউদ্দিন মিন্টুর বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় সাতটি মামলা, কালা জাহাঙ্গীর ওরফে ফেরদৌসের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী ও তেজগাঁও থানায় ছয়টি মামলা, খান মো. নাইম ইকরামের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা, শফিক উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় একটি মামলা, সদর উদ্দিন চান্দুর বিরুদ্ধে ভাষানটেক থানায় দুটি মামলা ও ওয়াসিমের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রেড নোটিশধারী পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বেশিরভাগই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও মামলা দীর্ঘ দিন ধরে শুনানি চলছে। সাক্ষীরা হাজির হয় না বলে মামলার বিচারিক কার্যক্রমও শেষ হয় না।
ওই কর্মকর্তা জানান, পলাতক সন্ত্রাসীরা সবাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছে। এর মধ্যে আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দীর্ঘ দিন ধরে দুবাই অবস্থান করছে। সেখানে সে অন্য এক দেশের নাগরিক হিসেবে দুবাইয়ের নাগরিকত্ব নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছে। এমনকি এখনও ঢাকার মতিঝিল-খিলগাঁও-সবুজবাগসহ আশেপাশের এলাকার অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক জিসানের সঙ্গে যৌথভাবে মতিঝিল ও এর আশেপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। কিন্তু গত বছর আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের মানিকের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর আধিপত্য কিছুটা কমেছে। মানিক বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, দীর্ঘ দিন ধরে ভারতে আত্মগোপনে থাকা মিরপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত এখন ইতালিতে অবস্থান করছে। ভারতে থাকার সময় সে ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিল। পরে জামিন নিয়ে বের হয়ে আবারও আত্মগোপনে চলে যায়। শাহাদত এখনও মিরপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। শাহাদতের নামে মিরপুরে এখনও চাঁদাবাজি চলে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমতি সুব্রত বাইনও দীর্ঘ দিন ধরে ভারতে পালিয়ে ছিল। ২০১২ সালে সে ভারতীয় পুলিশের হাতে একবার গ্রেফতার হয়েছিল। পরে জামিনে বের হয়ে নেপালে পালিয়ে যায়। আর আমিনুর রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে।
আব্দুল জব্বার মুন্না ভারত হয়ে জার্মানিতে অবস্থান করছে। পলাতকের তালিকায় থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তবে অন্য সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর ভারতে পলাতক রয়েছে। ভারত হয়ে প্রকাশ কুমার বিশ্বাস বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।- বাংলা ট্রিবিউন