বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
উপকূল এলাকায় তাণ্ডব চালালেও ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গিয়েছে। ফলে আমঝরা ছাড়াও জমিতে কেটে রাখা বোরো ধানের কিছুটা হলেও ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলার মোহনপুর, দুর্গাপুুর, বাগমারা উপজেলার পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার (২৭ মে) ভোর রাত থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কখনও গুঁড়িগুঁড়ি আবার কখনও মাঝারি। এমনভাবে চলেছে দিনভর। দেখা মেলেনি সূর্যের। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজশাহীতে কোথাও তেমনভাবে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার কারণে বেশকিছু গাছের ডাল ভেঙে গেছে। সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ কিছুক্ষণ পর পরে যাওয়া-আসা করেছে। অপরদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষদের। একইভাবে ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, মাঠে মূূলত আম রয়েছে। রেমালের প্রভাবে দমকা বাতাস বইছে। তাতে কিছুু আম ঝরছে। তা খুবই সামান্য। আর মাঠে বোরো ধান রয়েছে। যা ৮০ শতাংশ কৃষকের ঘরে উঠেছে। মাঠে ২০ শতাংশ ধান আছে। সেটা কাটতে দুই থেকে তিন দিন দেরি হবে। সবমিলে এতে তেমন ক্ষতি হবে না।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম জানান, রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুরে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ নটিকেল মাইল। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত চলছে। সেই সঙ্গে ঝড়ো বাতাস বইছে। এই বৃষ্টিপাত মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে। এসময়ের মধ্যে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
মেহনপুর প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে মোহনপুর উপজেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দমকা বাতাসে কলা ও পানের বরজের সামান্য ক্ষতি হলেও কৃষকরা বলছেন, এই বৃষ্টিপাত তাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ দীর্ঘ খরার পরে বৃষ্টিপাত জমি নতুন ফসলেরর বীজ বপনের জন্য দ্রুত প্রস্তুত করতে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে এই বৃষ্টি।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ জমির বোরোধান কৃষকরা ঘরে তুলে নিয়েছে। মাঠে পড়ে রয়েছে ২০ শতাংশ ধান। এসব ধান আরো দেরিতে কাটলেও সমস্যা নাই।
দীর্ঘ খরার কারণে জিআই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পানচাষ অধ্যুষিত মোহনপুরের পানচাষ ব্যহত হওয়ার উপক্রম শুরু হয়েছিল। রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিতে পানচাষে ব্যাপক উপকার হয়েছে। ফলে একটানা পানের বরজে ৮ থেকে ১০ সেচ না দিলেও চলবে।
উপজেলার হরিদাগাছি গ্রামের পানচাষি বদের উদ্দিন বলেন, বৃষ্টিপাতের ফলে পানবরজ এবং আমের উপকার হলো। অধিকাংশ ফসলের জন্য এ বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ এই বৃষ্টি না দিলে কয়েকদিন পরে শুকনা জমিতে সেচ দিয়ে চাষ করতে হতো।
অপরদিকে, দুর্গাপুুর ও বাগমারা প্রতিনিধি জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এই উপজেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বয়েছে। এতে ঘরবাড়ির তেমন ক্ষতি না হলেও ঝরেছে আম। একই সাথে ঝড়ো হাওয়ার কারণে গাছের ডালসহ কিছু পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে মাঠের বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
আমগাছির বাসিন্দা রাকিব বলেন, ১৮ কাটা জমির ধান কেটেছেন শ্রমিক দিয়ে। কিন্তু বৃষ্টিপাত হলো। তার জমি নিচু হওয়ার কারণে পানি জমেছে। আবহাওয়া পরিস্কার হলে তিনি জমিতে শ্রমিক লাগিয়ে ধান তুলে নেবেন। ইয়াছিন আলী বলেন, বেরিপুর এলাকায় বিদ্যুতের খুটি পড়ে গেছে। এছাড়া পানের বরজের হালকা ক্ষতি হয়েছে। একই সাথে যে চাষিদের জমিতে ধান রয়েছে। তাদের ধানের ক্ষতি হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জেও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। তবে এই বৃষ্টিপাতকে আমের জন্য আশীর্বাদ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। নাচোল উপজেলার গুঠইল এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি বছর তার তিন বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় মুকুল এসেছিল দেরিতে। আবার যে মুকুল ফুটে গুটি ধরেছিল, তা বড় হয়নি। বারবার সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে গাছে ঝুলে থাকা গুটিগুলো রোগাক্রান্ত হয়েছিল। তবে কিছুটা হলেও আমের উপকার হবে ২ দিনের বৃষ্টিতে।
শিবগঞ্জের আমচাষি ও উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামিম বলেন, আমের গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর থেকে টিকিয়ে রাখতে প্রচুর পরিমাণে সেচ দিতে হয়েছে। এতে কয়েক গুণ খরচ বাড়লেও আমের আকার বাড়েনি। একেকটি ফজলি, আশ্বিনা, ক্ষীরশাপাতিসহ আকারে বড় জাতের আমগুলো এখনো গুটি হয়ে রয়েছে। তবে রিমালের বৃষ্টিতে এখন বেশ উপকার হলো। কৃষকদের সেচের অর্থ বাঁচবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, তীব্র খরার কারণে আমগাছ পর্যাপ্ত রস পায়নি। ফলে আমের আকৃতি বড় হয়নি। আবার অনেক গাছের আম ঝরে গেছে সেচের অভাবে। তবে এই মুহূর্তে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তা আমের আকার বড় করবে, দীর্ঘস্থায়ী হবে মেয়াদ।