রেলস্টেশনে জন্ম নিলো ‘স্বপ্ন’

আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০১৬, ১১:৪৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘শুক্রবার দিবাগত রাত তখন প্রায় ১টা। মা প্রসব বেদনায় ছটফট করছেন। একে তো কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন, তারপর আবার বাকপ্রতিবন্ধী। অবশেষে প্রকৃতির লীলায় ওই স্টেশন ভবনের নোংরা কক্ষটি আলো করে পৃথিবীতে চিৎকার দিয়ে ওঠে সদ্যজাত শিশু। জন্মের সময় পৃথিবীতে তার প্রথম স্পর্শ হয়েছে একটি চটের বস্তার সঙ্গে। প্ল্যাটফর্ম-এ তখন কিছু শিক্ষার্থী বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। শিশুর চিৎকার শুনে তারা এগিয়ে যান। স্টেশনে থাকা এক বৃদ্ধ ও কয়েকজন স্থানীয় যুবকও ছুটে যান খবর পেয়ে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্টেশনের বিশ্রামাগারে জন্ম নেয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে স্বপ্ন। তাকে স্বপ্নময় করে গড়ে তোলার জন্য এই নাম রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম।

 

 

Rajshahi-picture-2
তিনি বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী ও কিছুটা মানিসক ভারসাম্যহীন মা ও তার সন্তার দুজনই সুস্থ আছেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্œ রেলস্টেশন বিশ্রামাগারের পাশে জন্মগ্রহণ করেন ‘স্বপ্ন’। ওই শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কয়েকজন মা ও শিশুকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান। পরে সুস্থ হলে গতকাল শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে আবারো সেই স্টেশনের পরিত্যক্ত বিশ্রামাগারে রাখা হয়েছে ওই মা ও নবজাতককে। সেখানে  রেখে মা শিশুকে দেখভালের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ওই মা কিছুটা মানসিক ভারসম্যহীন। তিনি কথা বলতে পারেন না। স্টেশনের পাশে পাশে ঘোরাঘুরি করেন। তিনি রাবির শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা বা খাবার চেয়ে নিয়ে দিনাতিপাত করতেন।
উদ্ধারকারীদের একজন নাজমুস সাকিব বলেন, আমরা শুক্রবার রাতে কয়েক বন্ধু স্টেশন বাজারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দেখি, স্টেশনের পরিত্যক্ত বিশ্রামগারে এক নারী মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় হাত-পা নাড়াচ্ছে আর পাশেই ঠা-ায় কাঁপছে ফুটফুটে এক নবজাতক। আর দেরি না করে স্থানীয়দের সহায়তায় সেখান থেকেই প্রায় হাজার খানিক টাকা উত্তোলন করলাম আমরা। পরে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করালাম। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মা ও শিশু সুস্থ রয়েছেন।
তিনি বলেন, মা ও নবজাতক সুস্থ হওয়ায় দুপুরে তাদেরকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। পরে আমরা কয়েকজন স্টেশন বাজারের ওই পরিত্যক্ত বিশ্রামাগারের কক্ষটি পরিস্কার করে সেখানেই মা-নবজাতককে সেবা দেয়া হচ্ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ