রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
কয়েক দশক ধরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহনের মধ্যে নতুন করে মিয়ানমার থেকে শরণার্থীদের ঢুকতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বুধবার সংসদে বলেছেন, “আমরা দুয়ার খুলে দিয়ে কাউকে স্রোতের মতো আসার সুযোগ করে দিতে পারি না।” মিয়ানমারে নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে দেশে-বিদেশে আহ্বানের মধ্যে একথা বললেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্েয তিন মাসে আগে সেনা অভিযান শুরুর পর বহু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় করলেও প্রতিদিনই বিজিবি তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দিতে বসানো হয়েছে কড়া পাহারা।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের মধ্েয বিএনপিও মানবিক কারণে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গত শতকের ৮০ এর দশকের শেষ ভাগে মিয়ানমারে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্েয রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আশ্রয় পায়। এরপর কয়েক দফায় আরও রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে।
শরণার্থী হিসেবে থাকা রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়া এবং জালিয়াতি করে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের বিষয়টিতে জোর দিয়ে ২০১২ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আর ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শেখ হাসিনার সরকার। এবারও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সংসদে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নে রোহিঙ্গা প্রশ্নে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
নানা ফাঁক-ফোকর গলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের জীবনধারণের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসার মতো পরিস্থিতি যেন না হয়, সেই পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাকে বলা হয়েছে, তারা এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি যেন না করে, যাতে ওখান থেকে রিফিউজি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।” বাংলদেশের বিজিবি এবং মিয়ানমারে বর্ডার পুলিশের মধ্যে বৈঠকের কথাও জানান সরকার প্রধান।
“আমরা যেটুকু করণীয় তা করে যাচ্ছি। মানবতার দিকে আমাদের তাকাতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশে (মিয়ানমার) যেন কোনো অঘটন না ঘটে, সেজন্যও ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সন্ত্রাসী হামলাকারীদের ধরে ফেরত
রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক দমন-পীড়নের আগে মিয়ানমারে সীমান্ত চৌকিতে হামলাকারীদের কেউ বা কারা বাংলাদেশে পালিয়ে এলে তাদের ধরে ফেরত দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী দেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। নয়জন বর্ডার পুলিশকে হত্যা করেছে। আর্মি ট্রাকে হামলা করেছে। তারপর এই ঘটনাটা (সেনা অভিযান) ঘটেছে।”
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় সে দেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান।
যারা মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ হত্যা এবং সেনাবাহিনীর উপর হামলার ঘটনায় জড়িত, তাদের মধ্যে কেউ বাংলাদেশে আত্মগোপন করে থাকলে তাদের আটক করে সেদেশে ফেরত পাঠাতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
“যারা এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আমাদের এখানে কোথায় লুকিয়ে আছে কি না, তাদের আমরা মিয়ানমার পুলিশের হাতে হস্তান্তর করব। তাদের কোনো স্থান হবে না। আমাদের বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে, আমাদের প্রতিবেশেী দেশে কোনো অঘটন ঘটাক, এটা আমরা মেনে নেব না।”
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ চলছে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কয়েকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া বর্ণনায় স্বজনদের হত্যা ও নিজেদের ধর্ষিত হওয়ার কথা জানান।
এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য সন্ত্রাসীদের দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এই ধরনের (পুলিশ-সেনাদের উপর হামলা) ঘটনা ঘটাল, তাদের জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ কষ্ট পাচ্ছে।
“এই অসহায় নারী-পুরুষের কোনো অপরাধ ছিল না। অপরাধ যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটিয়েছে, যারা এই ধরনের অবস্থাটা তৈরি করেছে।”- বিডিনিউজ