সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
১০০ তে ১০০! একেই বুঝি বলে। শ্রীলঙ্কার মাটি বাঘের প্রবল গর্জনে কেঁপে উঠলো। নিজেদের ১০০তম টেস্টে শতভাগ সাফল্যে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। কলম্বোর পি.সারা হয়ে থাকলো টাইগারদের চিরকালিন গল্প-গাঁথার এক মাঠ। যেখানে স্বাগতিক লঙ্কান সিংহদের নিজেদের শততম টেস্টে হারালো বাংলাদেশ। গতকাল রোববার বিকেলে মুশফিকুর রহিমের দলের ঐতিহাসিক এই জয়টা ৪ উইকেটের। এই প্রথম শ্রীলঙ্কাকে হারালো বাংলাদেশ। তাদের সাথে ১৮তম টেস্টে। তাও তাদেরই মাটিতে। নিজেদের ইতিহাসের ৯ম জয় এটি বাংলাদেশের। আর বিদেশের মাটিতে মাত্র চতুর্থ। ২০১৩ সালের পর আবার দেশের বাইরে জয় তুলে নিল টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৯১ রানের টার্গেট শেষ দিনে খুব সহজে না হলেও খুব কষ্টে পূরণ করে জয় তুলে নিতে হয় নি। অবিস্মরণীয় জয়টা ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯১ রান করে ফেলেছে দিনের প্রায় পৌনে এক সেশন বাকি থাকতে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৪৫ বলে ২২ রানে দক্ষ নাবিকের মতো দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করিয়েছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ (২) জয়সূচক রান তুলে মুশফিকের সাথে উৎসব করতে করতে ফিরেছেন।
পুরো ম্যাচেই ছিল টাইগারদের দাপট। এই জয়ে ২ ম্যাচের সিরিজটা ১-১ এ ড্র করলো বাংলাদেশ। গেল বছরের শেষে দেশের মাটিতে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় টেস্টে উড়িয়ে দিয়ে জিতেছিল টাইগাররা। প্রথমবারের মতো তাদের সাথে সিরিজ ১-১ এ ড্র করেছিল। সেই ম্যাচের পর আবার জিতলো বাংলাদেশ। মাঝে হেরেছে ৪ টেস্টে।
দশম দেশ হিসেবে শততম টেস্ট খেললো টাইগাররা। এর আগে নিজেদের ১০০তম টেস্টে জয় তুলে নিতে পেরেছে ৩টি দল। অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ দল হিসেবে নিজেদের ১০০তম টেস্ট জিতে এলিট ক্লাবে তো ঢুকে পড়লো টাইগাররা, সেই সাথে মর্যাদার আরো বড় কয়েকটি দলকে ফেললো পেছনে।
দিনের শুরুতে আগের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ভোগালেন। কিন্তু তারপরও শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করা গেল ৩১৯ রানে। ১৯০ রানের লিড স্বাগতিকদের। আড়াই সেশনের বেশি বাকি তখনো। প্রথম ইনিংসে লঙ্কানদের ৩৩৮ রানের জবাবে সাকিবের সেঞ্চুরিতে ৪৬৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। গোটা ম্যাচে দারুণ দাপট বাংলাদেশের। ব্যাটে-বলে। আর ১৯১ রানের টার্গেট শেষ দিনে পূরণ করতে গিয়ে নার্ভাসনেস তো পেয়ে বসেছিল। ২২ রানে হারাতে হয় ২ উইকেট। তাতিম ইকবাল ৮২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে বীরের কাজ করেছেন। যদিও আউটটা দৃষ্টিকটু। সাব্বির রহমানের (৪১) তৃতীয় উইকেটে ১০৭ রানের জুটি গড়েছেন তামিম। বাংলাদেশকে জয়ের পথ থেকে সরে যেতে দেয় নি ওই জুটি।
তবে শঙ্কার মেঘ তবু করেছে ওড়াউড়ি। ৪ উইকেটে ১৫৬ রানে চা বিরতিতে বাংলাদেশ। আর ৩৫ রান করলেই লঙ্কাপতিদের গুড়িয়ে ঐতিহাসিক জয়! কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেই এই ম্যাচের আসল নায়ক সাকিব আল হাসান (১৫) আউট। কিন্তু তখনো দিনের খেলা কতো বাকি! বাংলাদেশের দরকারী রান ও বাকি ওভার প্রায় সমান! এই অবস্থায় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম কি আর ভুল করতে পারেন? সেনসেশনাল মোসাদ্দেক হোসেন (১৩) জয় থেকে ২ রান দুরে থাকতে ফিরেছেন। ক্যাপ্টেনের সাথে তার জুটিটা ২৫ রানের। এই শ্রীলঙ্কাই কিছুদিন আগে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল তিন টেস্টের সিরিজে। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে ৪টি পরিবর্তন নিয়ে নামা টাইগাররা যেন ভিন্ন এক দল! নিউজিল্যান্ডে জয়ের শেষ চাপ রক্ষা করতে পারে নি। হেরেছে শেষ দিনে। কিন্তু এবার শেষ দিনে জয়ের সুযোগটাকে আরো কাছে এনে সেটিকে অর্জন করেই উৎসবে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম টেস্টের পর বিতর্কে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুম কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি সিরিজের আগে অকল্পনীয় এই জয় টাইগারদের যে আবার এক সুতোয় বাধতে বড় ভূমিকা রাখবে তা তো বুঝেই নেওয়া যায়। মাঠের বাইরে বসে মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহরা টেনশনে কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। তবে সীমিত ওভারের দলটাকে আরো উজ্জীবিত করার মন্ত্র কিন্তু মুশফিকের টেস্ট দলের এই চিরস্মরণীয় জয়েই অনেকটা সহজ হয়ে গেল।-পরিবর্তনডটকম