লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা ।। আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই

আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০১৭, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

রাজশাহীতে আইন লঙ্ঘন করে লাইসেন্স বিহীন ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ইটভাটায় ইট প্রস্তুত। অথচ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি নোটিশ পাঠানো ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেই সরকারি দফতরগুলো তাদের কাজ সীমাবদ্ধ রাখছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল। দুষণ ঘটছে পরিবেশ ও প্রকৃতির।বুধবার দৈনিক সোনার দেশে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পরিবেশ অধিদফতর সূত্র উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে জানান হয়, রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের আওতাভুক্ত। এই তিনটি জেলায় ইট ভাটা রয়েছে ৩৯৬টি। অথচ লাইসেন্স আছে মাত্র ৭৩ টির। ২২১টির কোনো লাইসেন্স নেই। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত কোনো ইট ভাটার লাইসেন্স নেই। রাজশাহী জেলার ১৮০টি ইটভাটার মধ্যে লাইসেন্স আছে ১৪টির ও নাটোরের ১১৪টির মধ্যে লাইসেন্স আছে ৫৯টির। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এ সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ব্যতিত কোনো ব্যক্তি ইট ভাটায় ইট প্রস্তুত করতে পারবে না। অথচ দিব্যি লাইসেন্স ব্যতিত এসব ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। ২০১৩ এর আইনে স্থায়ী চিমনি ইটভাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই তিনটি জেলায় স্থায়ী চিমনির ইটভাটা রয়েছে ১৭০টি।
মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে ইটের ব্যবহার অনস্বীকার্য। তবে ইট উৎপাদনের স্থান অর্থাৎ ইটের ভাটাকে অবশ্যই পরিবেশগতভাবে একটি সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে। নতুবা তা বাস্তুুসংস্থান তথা সভ্যতার জন্য হুমকির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ইটভাটার ফলে পানি ও মাটি দুষণ, বনাঞ্চল ও ফসলের ওপর এর বিরূপ প্রভাব মারাত্মক।
২০০৪ সালের রাজশাহী বিভাগের এই সমীক্ষণে দেখা গেছে যে মাটি পোড়ানোর ফলে ভাটা ও ভাটা সংলগ্ন ক্ষারীয় জমি অতি দ্রুত অম্লীয় হয়ে পড়ে। মাটির স্বাভাবিক জৈব পদার্থগুলি আগুনের আঁচে নষ্ট হয়ে যায়। মাটির স্বাভাবিক সালফারের পরিমাণে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া অন্যান্য ্উপাদান যেমন সোডিয়াম, পটাশ ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা ৭৫% অধিক হ্রাস পায়। এতে করে শুধু ইটের ভাটার মাটিই নয়, এর পাশ্ববর্তী মাটিগুলো তার স্বাভাবিক গুনাবলি হারিয়ে অনুর্বরা হয়ে পড়ে। মাটির জৈব পদার্থের হ্রাসের কারণে ভূমির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
অবৈজ্ঞানিকভাবে ইটের ভাটা স্থাপন ও নিষিদ্ধ জ্বালানির ব্যবহারের নেতিবাচক দিক সন্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশের এহেন দুষণ প্রশমন-নিরাময়ের জন্য জনগণ-সরকারের যৌথ প্রয়াস অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবশ্যই “ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮৯ এর সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ