রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়া লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরু। জেলায় ২০ শতাংশ গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আর মারা যাওয়ার হার ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এমন অবস্থায় আক্রান্ত গরুর রোগ মুক্তি নিয়ে দিশেহারা পশু লালন পালনকারীরা। রাজশাহী জেলায় সাড়ে ১২ লাখ গরু রয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার কম-বেশি সব উপজেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভব দেখা দিয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত গরু হয়েছে বাগমারা উপজেলায়। আক্রান্ত গরু বেঁচে ফেরার সংখ্যা কম হওয়ায় জীবন-জীবিকার সম্বল নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অনেকের। যদিও এই রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় বেশি বাছুর গরু। তবে কয়েকদিন থেকে বড় গরুও আক্রান্ত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গ্রাম্য পশু চিকিৎসক বলেন, ২০১৯ সাল থেকে দেশে এই রোগ দেখা দিয়েছে। প্রথম অবস্থায় কম থাকলেও বর্তমানে এই রোগের প্রাদুর্ভব বেড়েছে। তবে গত দুই বছরের তুলনায় আক্রান্ত এবছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। এবছর পদ্মা নদীর চরখিদিরপুর ছাড়াও নগরীর বুধপাড়া, পবার মোহনপুর, পাড়িলা, কাপাশিয়া, পারিলার কুয়ারসহ বিভিন্ন এলাকায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, এই রোগের চিকিৎসায় গরুর সুস্থ্য হতে সময় লাগছে। অনেকের গরু মারা যাচ্ছে।
নগরীর বুধপাড়া এলাকার মো. সারব আলীর ছেলে সাগর আলীর সাড়ে ১৩ মাস বয়সী ফিজিয়াম জাতের একটি বাছুর একই রোগে গরু মারা গেছে। তার দাম আনুমানিক দাম ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা বলে জানান তিনি।
সাগর আলী বলেন, আক্রান্ত গরুকে একটানা ৫দিন চিকিৎসা দিয়েছে পশু চিকিৎসক। তার পরেও ভালো হয়নি। কয়েকদিন সুস্থ্য মনে হলো। তার পরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে গরু। তার তিনদিন পরে গত শনিবার মারা গেছে গরুটা। এতে তার ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। গরুর বাছুরটি বাড়ির পাশে কবর দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ডাক্তার এসে ভ্যাকসিন করে গেছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। গরুটা অনেক কষ্টে ধুকে ধুকে মারা গেল। মারা যাওয়ার আগের আড়াই দিন এক তালে দাঁড়িয়ে ছিল গরুটা। এক সেকেন্ডের জন্য বসেনি গরুটা। পরে জোর করে শুয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন লক্ষ্য করা গেছে, গরু আর উঠতে পাড়ছে না। যেদিন গরুটা মারা যায়- সেদিন সকালে গোসল করায়। গোসলের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরে গরুটি মারা যায়।
শুধু সাগরের নয়, একই এলাকার শহিদ আলী ও রহিদ আলীর দুটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের গরুগুলোর চিকিৎসা চলছে। তাদের ভাই রজব আলীা বলেন, গরু দুটিই বাছুর। অল্প বয়স্ক। এক সপ্তা আগে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পশু চিকিৎসক নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছে। মোটামোটি আগের চেয়ে সুস্থ। তিনি বলেন, পাশের বাড়ির সাবরের ছেলে সাগরের গরুটা কয়েকদিন আগে একই রোগে মারা গেছে। সাগর ব্যাটারি চালিক অটোরিকশা চালায়, তবুও চিকিৎসা বাবাদ অনেক টাকা খরচ করেছে। তারপরেও বাঁচানো যায়নি গরুটা।
এছাড়া নগরীর পশ্চিম বুধপাড়ায় এক মাসের বাছুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। পাশের এলাকা মোহনপুর এলাকার আব্দুল মালেক নামের এক ব্যক্তির গরুর বাছুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। এছাড়া পবা উপজেলার কাটাখালীর কাপাশিয়া এলাকায় তিনটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সেগুলোর চিকিৎসা চলছে বলে স্থানীয় পশু চিকিৎসকরা জানায়।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে ২০ শতাংশ গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত রোগে মৃত্যুর হার ৮ থেকে ১০ শতাংশ। জেলার বাগমারা বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এই রোগের প্রতিকারগুলো নিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় এন্টিবায়েটিক ব্যবহার করতে নিষেধ করা হচ্ছে সবাইকে।