শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মধ্যস্থতায় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রোববার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তাদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন সত্ত্বেও রুয়েট প্রশাসন ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি বহাল রাখার দাবিতে অনড় ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নগর সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে রুয়েট প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে অনুরোধ করেন। পরে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তা গৃহিত হয়। এরপর উপাচার্যের কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকারসহ নেতাকর্মীরা আসেন। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন। পরে ২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সামনে এসে দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ। ঘোষণার পরই শিক্ষার্থীরা উল্লাসে মেতে ওঠেন।
গতকাল দুপুর ২টায় শিক্ষার্থীদের সামনে রুয়েটের উপাচার্য ঘোষণা দেন, চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি বাতিল করা হলো। একইসাথে ২০১৪ ও ১৫ শিক্ষাবর্ষের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং বন্ধ করে দেয়া টিনসেড হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি আগামী শনিবার থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার আহ্বান জানান। এ সময় সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও উপস্থিত ছিলেন।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হবার ক্ষেত্রে দুই সেমিস্টারে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। অন্যথায়, তাকে পুনরায় সেই বর্ষেই থাকতে হবে। এর আগে নিয়ম ছিল, কোনও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন না করলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তাকে পরীক্ষা দিয়ে ওই ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন আনা হয়।
ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে। বিশেষ করে, রুয়েটে ক্লাস-ল্যাবের সংকট থাকার কারণে যারা ক্রেডিট অর্জন করতে পারবে না তাদেরকে অন্য ব্যাচের সাথে ক্লাস বা ল্যাবে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে জায়গা ও শিক্ষাগত দুই দিকেই সমস্যা হবে। এছাড়া কোনও শিক্ষার্থী অসুস্থ বা অন্য কোনও সমস্যার কারণে পরীক্ষা দিতে না পারলে তার এক বছরের বেশি সময় ক্ষতি হবে। এমনকি সিলেবাসগত জটিলতাতেও পড়তে হয় ওই শিক্ষার্থীকে। তাই এ পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। তবে আজ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন একের অধিক বিষয়ে অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবে। সেক্ষেত্রে ব্যকলগ সিস্টেম অর্থাৎ পরবর্তীতে সেই বিষয়গুলো পরীক্ষা দিয়ে ক্রেডিট অর্জন করতে পারবে।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। টানা চারদিন আন্দোলনের পর ৩১ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরে ২ জানুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে টিনসেড হলে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ১৪ ও ১৫ সিরিজের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লেও গতকাল শনিবার থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে অংশ নেয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের আন্দোলনে ১১ আগস্ট একই দাবিতে রুয়েটের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন করেন রুয়েটের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। টানা দুই দিন আন্দোলনের পর ১২ আগস্ট রাতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সকল ক্লাশ-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে তখন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আসেন।