সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ শততম ম্যাচটি খেলতে নেমেছে লঙ্কানদের বিপক্ষে। ১১ যোদ্ধা ২২ গজে ব্যাট-বলের যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। আগামী চারদিন এই যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে হারাতে পারলেই শততম টেস্টটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মুশফিক বাহিনীর। শততম টেস্টের ১১ যোদ্ধাকে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে পাঠকদের জন্য এই আয়োজন :-
মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক) : বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ভাবা হয় মুশফিকুর রহিমকে। যার ওপর ক্রিকেট ভক্তরা আস্থা রাখতে পারেন-তিনি বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন মুশফিক। ক্যারিয়ারে ৫৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩,১৯১ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। গল টেস্টের আগে উইকেটকিপার হিসেবে খেললেও এখন শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলবেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। সাদা পোষাকে ৫ সেঞ্চুরির পাশাপাশি মুশফিকের রয়েছে ১৬টি হাফসেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রান ২০০। ২০১৩ সালে লঙ্কানদের বিপক্ষে গল টেস্টে বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটারের মধ্যে মুশফিক সর্বপ্রথম ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। শততম টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের পেছনে মুশফিকের ব্যাট কার্যকরী ভূমিকা রাখবে, ভক্তেদের এমনটাই প্রত্যাশা!
তামিম ইকবাল (সহ-অধিনায়ক) : বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার বলা হয় তামিম ইকবাল খানকে। তার চাচা আকরাম খানের নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। চাচার পর ব্যাট হাতে বাংলাদেশ দলে ক্রিকেটের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। যদিও মাঝে তামিমের ভাই নাফিস ইকবালও বেশ কিছুদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছেন। ৪৮ টেস্ট খেলে ৩,৫৪৬ রান এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। সর্বোচ্চ রান ২০৬। সেঞ্চুরি ৮ এবং হাফসেঞ্চুরি ২১টি। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ডানেডিনে অভিষেক হয়েছিল তামিম ইকবালের। অভিষেক ম্যাচে পর পর দুই ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করে নিজের প্রতিভা জানান দিয়েছিলেন তামিম। ২০১০ সালে লর্ডস ও ম্যানচেস্টারে ১০৩ ও ১০৮ রানের ইনিংস খেলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক। ২০১৫ সালে মুশফিকের করা ২০০ রানের রেকর্ডটি ভেঙে ২০৬ রান করেন তামিম। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ দাঁড় করান তামিম।
সাকিব আল হাসান : ওয়ানডে দলের সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। যদিও সম্প্রতি তার ব্যাটিং নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। তারপরও বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টারবয় হিসেবে সাকিবের নামটি সবার আগেই আসবে। ৪৮ টেস্ট খেলা সাকিব চার সেঞ্চুরি ও ২১ হাফসেঞ্চুরিতে ৩৩৪৮ রান করেছেন। বল হাতে আরও বিধ্বংসী সাকিব। সমান সংখ্যক ম্যাচে বল করে উইকেট নিয়েছেন ১৭০টি। টেস্টে এখন পর্যন্ত ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৫ বার। সেরা বোলিং ফিগার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৬ রানে ৭ উইকেট। টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক তিনি। ওয়েলিংটনে কিউইদের বিপক্ষে ২১৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ওটাই বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
ইমরুল কায়েস : ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক হয় ইমরুল কায়েসের। অভিষেকের পর মাঝে কিছুটা বাজে সময় কাটলেও সম্প্রতি ভালো ফর্মে আছেন এই ওপেনার। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট মিস করলেও দ্বিতীয় টেস্টের আগে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন তিনি। ২৭ টেস্টে ১৪৩২ রান এসেছে ইমরুলের ব্যাট থেকে। তিনটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে চারটি হাফসেঞ্চুরি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাদ পড়ায় ব্যাটিং অর্ডারে ইমরুলকে দেখা যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
মোসাদ্দেক হোসেন : শততম টেস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই টেস্টে অভিষেক হলো মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। ৮৬তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পেলেন এক মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করা মোসাদ্দেক হোসেন। ২১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ৭ সেঞ্চুরি ও ৮ হাফসেঞ্চুরিতে মোসাদ্দেকের সংগ্রহ ২০১৩৫ রান।
তাইজুল ইসলাম : ২০১৪ সালে কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তাইজুল ইসলামের। এরপর এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ১২টি টেস্ট খেলেছেন তাইজুল। নাটোরের এই ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ সাফল্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ৩৯ রানে আট উইকেট। সবমিলিয়ে ১২ টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ৪৬টি। এখন পর্যন্ত তিনবার পেয়েছেন পাঁচটি করে উইকেট।
সৌম্য সরকার : পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টে অভিষেক হয়েছিল সৌম্যর। নিজের অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। মাঝে কিছুটা সময় ছন্দে না থাকলেও গল টেস্টে পর পর দুই ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ৬ ম্যাচে তিন হাফসেঞ্চুরিতে করেছেন ৪১০ রান। সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেছেন ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
সাব্বির রহমান রুম্মন : ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক হয়েছিল সাব্বির রহমান রুম্মনের। কঠিন উইকেটে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে টেস্টে টিকে যায় সাব্বির। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্কোয়াডে থাকলেও গল টেস্টে একাদশে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত শততম টেস্টে খেলার সুযোগ পেলেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান। ৫ ম্যাচ খেলে ৩০.৮৭ গড়ে তিন হাফসেঞ্চুরিতে সাব্বিরের সংগ্রহ ২৪৭ রান।
মুস্তাফিজুর রহমান: অভিষেকের পর থেকেই বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে গেছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। কাউন্টি ক্রিকেটে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে কিছুটা ছন্দ হারালেও ধীরে ধীরে আগের সেই রূপে ফিরছেন মুস্তাফিজ। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হলেও গত দুই বছরে মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছেন। এই তিন টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা সাতটি। সেরা সাফল্য অভিষেক টেস্টের ৩৭ রানে চার উইকেট।
শুভাশীষ রায় : এই বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন শুভাশিষ। এরপর সর্বশেষ গলে লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচেও ছিলেন। দুই ম্যাচ মিলে তার পারফরম্যান্স আশা ব্যঞ্জক না হলেও টিম ম্যানেজমেন্ট তার ওপর আস্থা রেখেছেন।
মেহেদি হাসান মিরাজ : ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকেই বাজিমাত করেছিলেন মেহেদি হাসান। দুই ম্যাচের অভিষেক টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে যা ছিল রেকর্ড। অভিষেকের পর থেকে টানা সবগুলো ম্যাচই খেলেছেন। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টেও উজ্জ্বল ছিলেন মেহেদি। ৬ টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ৩১। অন্যদিকে শুরুতে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও গত দুই টেস্টে রান পাচ্ছেন। ৬ ম্যাচে তার রান সংখ্যা ১৬৩।