বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
কনিবার (৭ জুন) পবিত্র ইদুল আজহা। মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব, ইদুল আজহা- ‘কুরবানি ইদ’ হিসিবেও স্থানীয়ভাবে প্রচলিত। আপাত দৃষ্টিতে কুরবানি করা হয় তা মূলতঃ ইসলামী শরিয়তের নিয়মাবলির অংশ হিসেবে। এর মৌলিক শিক্ষা হল পৃথিবীর লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ অনৈতিকতার দ্বারা মানুষের মধ্যে যে পশুত্ব তৈরি হয় তা পরিত্যাগ করা এবং নীতি নৈতিকতা মেনে জীবনকে পরিচালিত করা। অর্থাৎ ইদুল আজহা ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষা দেয়। এ জন্য মহান আল্লাহতাআলা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমাদের রক্ত ও মাংস পৌঁছে না বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।’ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য বিষয়টিকে আরো সহজ করে দিয়েছেন। কবির ভাষায়- ‘মনের পশুরে কর জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই…।’ মনের মধ্যেকার পশুকে জবাই করে অন্তরাত্মাকে আলোকময় করতে পারলেই কেবল আল্লাহ ও জীব-জগতের প্রতি প্রেম-ভালবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধা ও দায়িত্বশীলতা অর্জন সম্ভব হবে। সুতরাং কুরবানির তাৎপর্যময় শিক্ষা হল একাগ্রচিত্তে নিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহ তা-আলার নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতির দিকে নিজেকে সমর্পণ করা।
সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে বুধবার (৪ জুন) শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। আরবি হিজরি সন ১৪৪৬ এর জিলহজ মাসের ৮ তারিখ বুধবার। আরবি বর্ষপঞ্জিকার শেষ মাস জিলহজের ৮ তারিখ মিনায় অবস্থানের মাধ্যমে শুরু হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর ৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন হাজিরা। ১০ জিলহজে পশু কোরবানি করেন হাজিরা। পশু কোরবানি শেষে আরও দুইদিন থাকে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা। হজ সম্পন্ন করতে সবমিলিয়ে সময় লাগে পাঁচদিন। এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক হাজিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কয়েক লাখ অভ্যন্তরীণ হাজি।
এই প্রথম ইদ-উৎসবে সরকারিভাবে দশ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে জুন পর্যন্ত ইদের ছুটি থাকবে। ১৫ জুন থেকে যথারীতি সরকারি- বেসরকারি অফিস সমূহ খুলবে।
শুভ হোক সব কিছুতেই। কর্মস্থলে ফেরাটাও সকলের জন্য শুভ হোক, নিরাপদ হোক। ইদের ছুটির দিনগুলিতে সড়ক দুর্ঘটনা একটি অনাহুত দুর্যোগ যা মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। একটু সতর্ক হলেই এই দুর্ঘটনা এড়ান যায়। গাড়িচালকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এই পরিস্থিতিকে অনেকটাই প্রশমিত করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে সচেতন থাকবেন- আমরা এ প্রত্যাশাও করি।
ইদুল আজহার তাৎপর্যময় শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনকে মানবিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ করুক। পরমত সহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার মাধ্যমে শান্তিময় বিশ্বসমাজ সমাজ গঠনে সকলকে উদ্বুদ্ধ করুক।
দৈনিক সোনার দেশের অগণিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভান্যুধায়ীদের প্রতি রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ইদ মোবারক।