বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমার শরৎকুমার রায়ের ৭৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৪৬ সালের ১২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
কুমার শরৎকুমার রায় নাটোরের দিঘাপতিয়ার জমিদার বংশের সন্তান ও দয়ারামপুরের খ্যাতিমান রাজা ছিলেন। তিনি নিজে ও তাঁর বংশীয় রাজা-মহারাজা-জমিদাররা ছিলেন প্রবল বিদ্যানুরাগী ও প্রজাহিতৈষী।
বাংলার ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশেষত বরেন্দ্রের লুপ্ত ইতিহাস-ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও বিকাশে রেখেছেন কৃতিত্বপূর্ণ অবদান। রাজশাহীর ‘বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কুমার শরৎকুমার রায়। বাংলার ইতিহাসচর্চার শ্রেষ্ঠ পাদপীঠ বাংলাদেশের প্রথম এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করে তিনি বাংলার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
বর্তমান নাটোরের উত্তরা গণভবনই ওই সময়ের দিঘাপতিয়ার জমিদার বাড়ি। এই বাড়িতেই কীর্তিমান বাঙালি শরৎকুমার রায় ১৮৭৬ সালে ২২ এপ্রিল জন্মগ্রহণ। তাঁর পিতা মহারাজা প্রমথনাথ রায়, মাতা দ্রবময়ী দেবী ও পরিবারের সদস্যগণও ছিলেন ইতিহাসের প্রতি গভীর অনুরাগী। শৈশবেই শরৎকুমার ইতিহাসের প্রতি জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন।
কুমার শরৎকুমার রায়ের শিক্ষা জীবনের সূচনা ঘটে রাজশাহী শহরে। তিনি কলেজিয়েট স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। এরপর, ১৮৯০ সালে তাঁর বড় দুই সহোদর প্রমদানাথ ও বসন্তকুমার এন্ট্রাস পাশ করার পর পিতা মহারাজা প্রমথনাথ রায় তাঁর চার পুত্রকে (প্রমদা-বসন্ত-শরৎ-হেমেন্দ্র) শিক্ষালাভের জন্য একসাথে কলকাতায় প্রেরণ করেন। এবং এন্ট্রাস পাস করেন ।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শরৎকুমারের সরাসরি শিক্ষক ছিলেন আচার্য স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। এই কলেজে অধ্যয়নকালে শরৎকুমারের অধীত বিজ্ঞান বিষয় শিক্ষা দেয়ার জন্য প-িত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীকে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। প্রখ্যাত এসব মনীষীগণের সংস্পর্শে কুমার ঋদ্ধ হয়েছেন।
কুমার শরৎকুমার রায় একাধারে সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও প্রতœতত্ত্ববিদ ছিলেন। শরৎকুমারের বেশ’কটি গ্রন্থ ও বহু প্রবন্ধের মধ্যে ৫৪৭ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘মোহনলাল’ শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। তাঁর ‘শিখগুরু ও শিখজাতি’ গ্রন্থের ভূমিকা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে দেন, এতে প্রতিভাত হয় যে উভয়ের সম্পর্ক কত গভীর ছিল।
শরৎকুমার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৮৯২ সালে প্রবেশিকা, রিপন কলেজ থেকে ১৮৯৪ সালে এফএ (ফাস্ট আর্টস) এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৯৯ সালে স্নাতক ও ১৯০০ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে এমএ করার পর কুমার শরৎকুমার রায় একই বছরে অনুজ হেমেন্দ্র কুমার রায়কে নিয়ে ইউরোপ যাত্রা করে থিবস, পম্পেই, মিশর-সহ ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রাচীন নগরী এবং বিশে^র বিভিন্ন বিখ্যাত মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। বিদেশ সফরে গিয়ে প্রাচীন ঐতিহাসিক নগরী দেখে কুমার মুগ্ধ হন এবং মাতৃভূমির ইতিহাসচর্চায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেন।