মাহাবুল ইসলাম
‘শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ রাতের বুকে ঐ’, ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক শরৎ’, ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে, এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ রথে’- শরৎ বন্দনায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রকৃতির সঙ্গে শরৎ, শরৎের সঙ্গে জীবনের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। যার দৃশ্যত প্রেক্ষাপট ধরা পড়ছে রাজশাহী নগরীজুড়ে। বিশেষত পদ্মার জেগে ওঠা চরে।
ছয় ঋতুর অপরূপ যে দৃশ্য প্রকৃতিতে ধরা পড়ে, এর মধ্যে ব্যতিক্রম ও অনন্য শরৎ। শরতে সাদা কাশফুল আর শিউলির আধিপত্য ছাড়াও ফোটে আরও অনেক সহচরী ফুল।
শরৎ এ ঝকঝকে নীল আকাশ। মৃদু বাতাস দোলা দিচ্ছে তাদের নরম পাপড়িতে।
ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে শরৎ বাংলার ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু। শরতের স্নিগ্ধতাকে আরও মোহময় করে এ মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদী ও জলাধারে ফোটে কাশ-কুশ, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় থাকে অসংখ্য জলজ ফুল।
শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক! সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, আলোছায়ার খেলা দিনভর- এসব মিলেই তো শরৎ!
শরৎকালের প্রথম মাস অর্থাৎ ভাদ্রের শুরু থেকেই শরতের আবির্ভাবটা লক্ষণীয়। শরতের স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর।
কাঁশফুল ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। চিরল পাতার দু’ধারে খুবই ধার। পালকের মতো নরম এর সাদা ফুল। নগরীর পাশে দিয়ে বয়ে চলা পদ্মার ধারে ও জেগে ওঠা চরে কাঁশফুলের বিশাল সমাহার দেখা যাচ্ছে।
সে রূপে আমোদিত প্রকৃতি আর সেই সাথে প্রফুল্ল এবং উৎফুল্লচিত্তে ভ্রমণ পিপাসুরা উপভোগ করছেন। শরতের মনভোলানো প্রকৃতিতে মন যে কী চাই, তা বোঝা বড়ই মুশকিল! রোদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলায় মনেও যেন জমে মেঘ, আবার কখনো হয়ে ওঠে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। কিন্তু ব্যস্ত এ নগরে, শত ব্যস্ততার মাঝেও মনের আকাক্সক্ষায় শরতের রঙে সাজছে দর্শনার্থীরা। তবু যেন মনে হয় হারিয়ে যাই-শরতের কাশফুল, গোধূলি, শিউলি আর জ্যোৎস্নার মাঝে। প্রিয়জনের হাত ধরে অনুভব করি স্নিগ্ধতা।
কালের ধারায় প্রকৃতি জগতে প্রাণের সজীবতা, রং, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছে ঋতুরানি শরৎ। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুল দেখলেই আমরা সবাই বুঝি এসেছে শরৎ। কাশফুল শরতের আগমনের প্রতীক। বাতাসে দোলে মোহনীয় ভঙ্গিমায়। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ, মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসের দোলায় দুলতে থাকে তখন মনটাও যেন আন্দোলিত হয়।
নগর সংলগ্ন পদ্মার তীরে শরৎের এ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, মালতি, টগর, হাসনাহেনা আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ আর লম্বা লম্বা তালগাছে পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ। রাজশাহীতে এর সবই আছে। এ সৌন্দর্য বেশ উপভোগ্য।
গ্রামের মেঠোপথে শরতের এ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন ইব্রাহিম আলী। তিনি বলেন, শিশির ভেজা সকালে যখন জমিতে কাজে যায়, তখন রাস্তার দু’পাশে কাঁশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। হাত দিয়ে স্পর্শ করলে একটা অসাধারণ অনুভূতি আছে। এসময় সকালে মোহময় আবহ থাকে। যা অন্য ঋতুতে খুঁজে পাওয়া যায় না। সত্যি শরতের প্রকৃতি বড়ই বৈচিত্র্যময় ও লাবণ্যময়ী।