রাবি প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন ১০ তলাবিশিষ্ট শহিদ এএইচএম কামরুজ্জামান হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর দুইটার দিকে সরেজমিনে এ অভিযান চালায় তারা। অভিযানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুদক।
এর আগে রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুদকের এই তদন্ত দল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক তারিকুল হাসান, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার শাহরিয়ার রহমান ও প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আজাদ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৪ হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে নির্মিত এই হলটি ১০ তলাবিশিষ্ট হবে। ভবনের মধ্য থাকবে ৩টি ব্লক। প্রায় ১ হাজার আসন-বিশিষ্ট এ হলের সব কক্ষই হবে ২ই আসন-বিশিষ্ট। পুরো ভবনে ৪টি লিফটের ব্যবস্থা থাকবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ওঠানামা করতে পারবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
বিশ্ববিদ্যালয়’র ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৭০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই হল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ-সন্স কনস্ট্রাকশন এই হলের নির্মাণকাজ করছে।
এর আগে চলতি বছরের গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের এক অংশের ছাদ ধসে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ৯ জন নির্মাণশ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেই রাতেই জরুরী সভা ডেকে ওই ঘটনার কারণ জানতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়-প্রশাসন। সেসময় তদন্ত করে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম পায়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
তবে আলোচিত রূপপুর পারমাণবিক বালিশকাণ্ডে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ কন্সট্রাকশনকে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বালিশকাণ্ডে বেশ আলোচিত ছিল তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদেরই একটি ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। বালিশকাণ্ডের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে পড়া ঘটনায় আবারও আলোচনায় আসে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর ২.১৫টায় অভিযান শেষে রাজশাহী জেলা-সমন্বিত কার্যালয় দুর্নীতি দমন কমিশন’র (দুদক) সহকারী-পরিচালক মো. আমির হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভৌত অব-কাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে নিরপেক্ষ প্রকৌশলীসহ অভিযান পরিচালনা করেছি। মূলত আমাদের কমিশনের ১০৬ হটলাইন নম্বরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা এনফোর্সমেন্ট অভিযানে এসেছি। আমরা ভবনসংক্রান্ত সকল নথিপত্র সংগ্রহ করেছি।
প্রাথমিকভাবে ভবন নির্মাণকাজে অসংগতি ও অনিয়ম পেয়েছি। পরবর্তীতে সমস্ত আলামত কমিশনের নিকট সাবমিট করার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক তারিকুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদক এসেছিল নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের দুর্ঘটনার বিষয়ে। তারা আমাদের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিল, আমরা সেগুলো দিয়েছি।’