শালিসে ক্ষমা না চাওয়ায় নাটোরে এক পরিবার দুইবছর থেকে একঘরে

আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০১৭, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

নাটোর অফিস


নাটোরে গ্রাম্য প্রধানদের শালিসি বৈঠকে হুজুরের কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় আলেয়া বেগম নামে এক পরিবারকে গত দুই বছর থেকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। সদর উপজেলার ভবানী গ্রামে মসজিদভিত্তিক শিশুদের কোরআন শিক্ষার সময় দুই শিক্ষার্থীর দ্বন্দ হলে আঁখি নামে এক শিক্ষাথীর দাদী ও মসজিদের হুজুরের কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটে।
এরপরে শালিসি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ওই পরিবারের সঙ্গে এলাকার কাউকে মিশতে না দেয়া এবং তাদের জমিতে বিলের ডিপ মেশিন থেকে সেঁচের জন্য পানি দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নাটোর সদর উপজেলার ভবানী গ্রামের মৃত আলী আকবরের মেয়ে আলেয়া বেগম বলেন, প্রায় দুই বছর আগে প্রতিদিনের মতো এক সকালে তার নাতনী আঁখি স্থানীয় মসজিদে কোরআন শিখতে যায়। মেঝেতে বসা নিয়ে পাশের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি হুজুর নজরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করেন। এনিয়ে হুজুরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকার গ্রামপ্রধান আবুল, নূরুল ইসলাম, নবী, নূরুল আমিন ও সৈয়দ গ্রাম্য শালিস ডেকে তাকে শালিসের মধ্যেই হুজুরের কাছে ক্ষমা চাইতে বলে। তিনি হাজির না হওয়ায় গ্রাম প্রধানরা তার পরিবারকে একঘরে করে দেন।
তিনি দাবি করে বলেন, তার একমাত্র ছেলে শাহিন একজন দিনমজুর। মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রির কাজও করেন। এছাড়া বাড়ির পাশে তার নিজের প্রায় একবিঘা আবাদি জায়গা এবং বিলের মাঝে প্রায় সোয়া বিঘা আবাদি জায়গা লীজ নেয়া আছে। একঘরে হওয়ার কারণে তাদের সঙ্গে কেউ মিশে না। তার ছেলেকে কেউ কাজ দেয় না। তাদের জমিতে বিলের ডিপ মেশিন থেকে সেঁচের জন্য পানি নিতে দেয় না। গত বছর বাড়ির পাশের জমিতে পাটের চাষাবাদ করা হলেওযেখানে ১০-১৫ মণ পাট হওয়ার কথা সেখানে পানির অভাবে পাটের ফলন হয়েছে মাত্র ৩ মণ। অপরদিকে বিলের ধান চাষের জমিতে ধান চাষ করা হলেও যেখানে প্রায় ৩০ মণ ফলন হওয়ার কথা সেখানে পানির অভাবে ফলন হয়েছে মাত্র ৮ মণ। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে তিনি পাশের ছাতনী গ্রামের সমাজভুক্ত হলেও ভবানী গ্রামপতিদের বাধার কারণে সেই সমাজ থেকেও তাদেরকে গত প্রায় ৪ মাস আগে বের করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করায় দুশ্চিন্তায় তার শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ধরেছে।
এলাকার গ্রামপ্রধান আবুল ও নূরুল আমিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আলেয়া বেগম নারী হয়েও মসজিদে প্রবেশ করে হুজুরকে গালিগালাজ করেছে। এজন্য গ্রাম্য শালিস ডেকে তাকে শালিসের মধ্যেই হুজুরের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তাকে চলাফেরা করতে বাধা নিষেধ করা হচ্ছে না। তার মতো করে সে চলছে, তবে সমাজের লোকজনের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
ভবানী মসজিদের হুজুর নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন তিনি তার রুমে ছিলেন। এসময় আলেয়া বেগমের নাতনীর সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর কথাকাটাকাটি ও ঝগড়ার সূত্র ধরে তিনি মসজিদে প্রবেশ করে সেই শিক্ষার্থীকে শাসাতে থাকে। আমি নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না। এরপর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও গালিগালাজ করেছে শুনে সমাজের লোকজন তাকে একঘরে করেছে।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান জানান, এ ধরনের কোন অভিযোগ থানায় আসে নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।