শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক:
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পূর্তির দিনে ‘শহীদী মার্চ’ থেকে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের শপথ পুনঃউচ্চারিত হল ঢাকার রাজপথে।লাখো ছাত্র-জনতার এই শহীদী পদযাত্রায় মুহুর্মুহু ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে মু্ক্িতর স্লোগান, মুক্ত বাংলাদেশের স্লোগান। মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণআন্দোলনে নিহত অনেকের নাম।
শহীদদের স্মৃতি উচ্চারণ করে তাদের আত্মত্যাগের মহিমাকে স্লোগানের ভাষায় রূপ দিয়ে রাজপথের উত্তাল জনতা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিয়ে পায়ের তালে পা রেখে ঢাকার রাস্তা প্রদক্ষিণ করছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ‘শহীদী মার্চ’ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অতিক্রম করে।
এর আগে বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মার্চটি শুরু হয়। পতাকা উড়িয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায় তারা। শহীদদের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড নিয়ে যুক্ত হয়েছে বহু মানুষ।
এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দেয়, ‘তুমি কে আমি কে/ বাঙালি, বাঙালি’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধর রক্ত/ বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে/ খুনি কেন বাহিরে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে/ রক্তে আগুন লেগেছ ‘, ‘বিচার চাই, বিচার চাই/ খুনি হাসিনার বিচার চাই।’
শিক্ষার্থীরা ‘আমাদের শহীদেরা/ আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘২৪ আমাদের বিশ্বাস’- এ ধরনের নানা স্লোগান দেয়।
মিছিলের স্লোগানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করা হয়। তার আমলে হত্যা, গুম-খুনের বিচারের আওয়াজ ওঠে।
শহীদী মার্চে তেজগাঁও কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নূরজাহান বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কমার্স কলেজ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়, খিলগাঁও মাকজালুল উলুম মাদরাসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
মার্চটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে নীলক্ষেত হয়ে সায়েন্সল্যাব, কলাবাগান, মানিক মিয়া এভিনিউ (সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে), ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্য দিয়ে শহীদ মিনারে এসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অতিরিক্তি বলপ্রয়োগের ফলে শেষপর্যন্ত সরকার পতনের একদফায় রূপ নেয়। ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। পালিয়ে ভারতে চলে যান তিনি।
৮ অগাস্ট বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে শপথ নেয় অন্তর্র্বতী সরকার, যেখানে জায়গা করে দেওয়া হয় দুজন ছাত্র নেতাকে, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন।
এদিকে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক মাস পূর্তিতে একটি বার্তা দিয়েছেন।
বার্তায় তিনি বলেছেন, “আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা নিলাম- শহীদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের আত্মত্যাগকে জাতি হিসাবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন, সে সুযোগকে আমরা কখনো হাতছাড়া হতে দেবো না।
“আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বই।”
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ