শিক্ষকদের ‘কল্যাণে’ এবার এসএসসির রেজিস্ট্রেশনেও বাড়তি টাকা

আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১২:০৭ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ভর্তি ফির সঙ্গে ১০০ টাকা করে নেওয়া হলেও এবার নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফির সঙ্গেও এ বাবদে অতিরিক্ত অর্থ আদায় শুরু হয়েছে।

চলতি বছর প্রথমবারের মত বেসরকারি স্কুলের নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে ১০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে, যা নিয়ে ‘নাখোশ’ অভিভাবকরা।

তারা বলছেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পান। ফলে অবসর সুবিধা দেওয়াটাও সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সেটা ‘চাপানো হচ্ছে’ শিক্ষার্থীদের কাঁধে।

শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য বেসরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফির সঙ্গে ১০০ টাকা করে আদায়ের চল শুরু হয় ২০২৩ সালে। এরপর চলতি বছর থেকে বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিকেও ভর্তিতে এ খাতে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়। আগামী বছরেও তা দিতে হবে। তবে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে এই খাতের জন্য অর্থ কেটে রাখা এবারই প্রথম।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় রেজিস্ট্রেশনে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০০ টাকা ফি আদায় শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।”

গত কয়েক বছরের তুলনায় ১২৫ টাকা বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন ফি ২৯৬ টাকা নির্ধারণ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড। শুক্রবার থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ফরম পূরণ ও টাকা জমা দেওয়া যাবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে প্রথমে নির্ধারিত তারিখের পরে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগের কথা বলা না হলেও গত ১৭ অক্টোবর সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৪০ টাকা বিলম্ব ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া হয়।

এবার রেজিস্ট্রেশন ফি ২৯৬ টাকা নির্ধারণ হলেও গতবছর এই ফি ছিল ১৭১ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের থেকে এবার ১২৫ টাকা ফি বেড়েছে।
এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ১০০ টাকা ছাড়াও আরও একটি খাতের ফি বাড়ানো হয়েছে। আর আরেকটি খাত নতুন যুক্ত হয়েছে।

আগে স্কাউটস ফি ১৫ টাকা থাকলেও চলতি বছর তা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে এবং আরও ১৫ টাকা ‘গার্লস গাইড ফি’ হিসেবে নতুন যুক্ত হয়েছে মোট ফির সঙ্গে। এর সঙ্গে ৮০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি, ৫০ টাকা ক্রীড়া ফি, পাঁচ টাকা বিজ্ঞান প্রযুক্তি ফি, ১৬ টাকা রেডক্রিসেন্ট ফি ও পাঁচ টাকা বিএনসিসি ফি দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা আদায়ের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক তামান্না আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পাওয়া বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। এ খাতের টাকা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কাম্য নয়।

“তবে বোর্ড যখন এটি রেজিস্ট্রেশন ফিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তখন এটি দিয়েই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ ছাড়া তো আর উপায় নেই।”
ঢাকার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মুরাদ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার যখন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে তখন এটি দিয়েই বাচ্চাকে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। কিন্তু সরকারে উচিত এই ধরনের ফি শিক্ষার্থীদের ওপর না চাপানো।”

বিষয়টি ‘অনৈতিক’
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি কোষাগার থেকে এমপিও বাবদ মাসিক বেতন-ভাতা পেলেও সরকারি কর্মচারীদের মত তারা পেনশন পান না। তারা অবসরের পরে এককালীন কিছু টাকা পেয়ে থাকেন, যার জন্য তাদের নিজেদের এমপিও থেকে একটি অংশ প্রতি মাসে কেটে রাখা হয়।

শিক্ষকদের এমপিও বা মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ এই দুই সুবিধার জন্য কেটে রাখা হয়, যার ৬ শতাংশ যায় অবসর সুবিধা খাতে ও ৪ শতাংশ কল্যাণ ট্রাস্টে। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার আগে অবসর ও কল্যাণের জন্য নেওয়া হত ৬ শতাংশ। অর্থ কেটে রাখার পরিমাণ বাড়লেও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সেই টাকা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

তবে শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ টাকা আদায়ের বিষয়টি ‘অনৈতিক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের খরচ সরকার বহন করে। বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য পেনশনের বিকল্প হিসেবে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা চালু করা হলেও এর ব্যয় সরকার বহন করছে না।

“চালুর সময় কথা ছিল, সরকার প্রতি বছর বাজেটে অব্যয়িত টাকা থেকে একটি অংশ থোক বরাদ্দ দেবে। সেটি ব্যাংকে রেখে দেওয়া হবে আর সে টাকার ইন্টারেস্ট থেকে শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হবে। সেটি না দিয়ে শিক্ষকদের এমপিও থেকে টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। আগে এমপিওর ৬ শতাংশ কাটা হলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।”

মাজহারুল হান্নানের ভাষ্য, “এর আগে যখন শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফির সঙ্গে এ খাতে টাকা আদায় করা শুরু হল, তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছি। এবার রেজিস্ট্রেশনেও এ খাতে টাকা আদায় শুরু হল।
“এটি একদিকে যেমন অনৈতিক, অপরদিকে শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করে। শিক্ষকদের সুবিধার জন্য বাচ্চাদের কাছ থেকে কেন টাকা নিতে হবে।”

রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে ১২-১৮ বয়সীরা
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের শর্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ে যে শিক্ষার্থীরা চলতি বছর নবম শ্রেণিতে পড়ছেন, তারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবেন।

১২ বছর পূর্ণ না হলে এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সের কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না। অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে গ্রুপ বিভাজন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশনের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপ ও বিষয় সম্পর্কে জানাবেন।

শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের তথ্য যুক্ত করতে শ্রেণি শিক্ষকসহ শিক্ষকদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি করতে স্কুলগুলোকে বলেছে ঢাকা বোর্ড। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর চূড়ান্ত তালিকা সাবমিটের আগে কমিটির সদস্যরা ভর্তি ফরমের তথ্য সনদের সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত করবেন। চূড়ান্ত তালিকা প্রিন্ট করে প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করতে হবে।

বোর্ড বলছে, রেজিস্ট্রেশন কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপ সম্পর্কে জানাবেন। শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করে কোন বিভাগ বা গ্রুপ নেবে তা নিশ্চিত করবে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। আবেদনে উল্লিখিত গ্রুপ অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করবেন। শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফল বিবেচনা করে গ্রুপ বিভাজন করা যেতে পারে বলেও বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নির্ধারিত তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে বা এ কারণে শিক্ষার্থীর কোনো সমস্যা হলে এর দায় দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা বোর্ড। রেজিস্ট্রেশন করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (সরকারি ও বেসরকারি) মাধ্যমিক পর্যায়ে স্বীকৃতি বা হালনাগাদ থাকতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ