বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
মোহাম্মদ ফজলুর রহমান :
একটি দেশ বা রাষ্ট্রের বড় সম্পদ হলো মানবসম্পদ। যে দেশের মানবসম্পদ যত শক্তিশালী, সে দেশ ততই উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে। আর এই মানব সম্পদ তৈরীর কাঁচামাল হলো শিক্ষা। একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠিও এটাই। যে দেশ শিক্ষাখাতে মনোযোগ যতবেশি দিয়েছে, সে দেশ ততই উন্নতির চরম শিখরে সামিল হয়েছে।
এদিকে মানব সম্পদ তৈরির মূল কারিগর কিন্তু শিক্ষক, গোটা জাতি গঠনের দায়িত্ব তাদের হাতেই ন্যস্ত। শিক্ষকেরাই পারে শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করতে, সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ গড়ে তুলতে। কিন্তু শিক্ষকের জীবনযাপন থেকে শুরু করে তাদের মর্যাদার প্রতি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না বললেই চলে। শিক্ষা ও শিক্ষক যে একই সুতায় গাঁথা, এটা আমরা অনেকেই অনেক সময় ভুলে যাই।
একটি অন্যটির সঙ্গে এমনভাবে জড়িত ঠিক যেন মমতাময়ী মা কে ছাড়া পৃথিবীতে সন্তানের অস্তিত্ব অর্থহীন। তদ্রূপ শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মূল্যও নিষ্প্রাণ। শিক্ষা যদি হয় জ্ঞানের আলো, সেই আলোর প্রদীপ হলো শিক্ষক। পৃথিবীতে মহৎ পেশার মধ্যে অন্যতম পেশা হল শিক্ষকতা পেশা।
তারা যেন তাদের নিজস্ব পেশায় যথাযথ মূল্যায়নের অংশীদার হতে পারেন, এজন্য তাদের সুযোগ সুবিধার দিকে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। শিক্ষকদের বেতন- ভাতা থেকে শুরু করে সুন্দর জীবন যাপনের দিকে মনোযোগ দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক জোরালো হওয়া জরুরী। শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গঠনে, সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে পিতৃতুল্য শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষকদের প্রত্যাশা এবং স্বপ্নের জায়গা হলো শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত সফলতার নিশান। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে প্রায়ই শিক্ষকদের অবমাননার বিষয় লক্ষ্য করা যায়।
শিক্ষকদের সম্মানের মেরুদণ্ডই যদি ভেঙে পড়ে তাহলে তাঁরা কিভাবে জাতির মেরুদণ্ড গড়বেন? এই দূরাবস্থার ইতি টানতে হবে। এছাড়া আরো কিছু সমস্যার সমাধান এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্করণ করা খুবই প্রয়োজন।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশের প্রতি ঝোক ক্রমশ বেড়েই চলছে। তাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করার ফলে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করেই বিদেশমুখি হচ্ছে তারা। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ফলে অযোগ্যরা যোগ্য স্থান গুলো দখল করে আছে। ফলে মেধাবীদের দেশত্যাগের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কোনো গতি থাকে না। দুর্নীতির খপ্পরে পড়ে এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
আরো বলতে গেলে আমাদের দেশে প্রায় সকল সেক্টরেই বেতন- ভাতাদির সুবিধা অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক কম। শিক্ষাখাতে এ প্রভাব অনেকটাই বেশি। শিক্ষকদের প্রতি কর্তৃপক্ষের নমনীয় দৃষ্টিতে তাকানো জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষাখাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়, দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে এদিকে মনোযোগ সহকারে দৃষ্টি দিতে হবে। শিক্ষাখাত যেন অন্যান্য খাতের চেয়ে প্রাধান্য পায়, বাজেট প্রণয়নের সময় উচ্চ মহলকে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন ও যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে। জেনারেল শিক্ষার সাথে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ক্যারিয়ার গঠন মূলক বিষয়, কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি টেকসই পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে।
যেন কাঙ্খিত শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষার্থীরা তাদের নীতি- নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটিয়ে দেশ কে একটি আদর্শ জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে আমি আশাবাদী।
প্রস্তাবক : প্রভাষক (সমাজকর্ম), সলপ ডিগ্রি কলেজ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ