শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ রুয়েট উপাচার্য || রক্ত ঢেলে প্রতিবাদ, দুপক্ষই অনড়

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক



রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ন্যূনতম ‘৩৩ ক্রেডিট’ পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে নিজেদের রক্ত ঢেলে প্রতিবাদ ও প্রশাসন ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। গতকাল শনিবার রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে অবস্থান করছেন। তারা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। অন্যদিকে, প্রশাসনও অনড় অবস্থানে আছেন।
গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়ার পর একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর সিরিঞ্জ ব্যবহার করে নিজেদের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের প্রবেশ পথে ঢেলে সেখানে অবস্থান নেয়। পরে দুপুর ২টার দিকে প্রশাসন ভবনের দ্বিতীয় তলার বারন্দায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন থেকে রাত ৯টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রুয়েট উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখানে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
রুয়েট সূত্রে জানায়, প্রশসান ভবনের প্রবেশ পথে বিভিন্ন জায়গায় রক্ত দিয়ে লিখা রয়েছে, ‘৩৩ ব্যান’। এছাড়া সিরিঞ্জগুলো পাশাপাশি রেখে সাজানো হয়েছে-‘৩৩’। পাশে দিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী মাটিতে বসে আছে। অন্যদিকে, প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নিয়ে আছেন। এসময় তারা ৩৩ ক্রেডিট বাতিল চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৮ জানুয়ারি থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমাদের আন্দোলন দমাতে একটি হলের শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমরা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছি। বিক্ষোভ মিছিল, রক্ত ঢালাসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহা করবো না।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, রুয়েট শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হবার ক্ষেত্রে দুই সেমিস্টারে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। অন্যথায়, তাকে পুনরায় সেই বর্ষেই থাকতে হবে। এর আগে নিয়ম ছিল, কোনও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন না করলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তাকে পরীক্ষা দিয়ে ওই ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন আনা হয়।
এর আগে আন্দোলন দমাতে গত ৩১ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরে ২ জানুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে টিনসেড হলে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ১৪ ও ১৫ সিরিজের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লেও আজ শনিবার ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে অংশ নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিল ৩৩ ক্রেডিট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই আমরা ৩৩ ক্রেডিট বাতিল করছি না।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা তাদেরকে বারবার আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনও কথা না শুনে আমার কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের আন্দোলনে ১১ আগস্ট একই দাবিতে রুয়েটের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন করেন রুয়েটের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। টানা দুই দিন আন্দোলনের পর ১২ আগস্ট রাতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সকল ক্লাশ-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে তখন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আসেন।