শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহনণের প্রবণতা সমাধানের উপায় কী?

আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

এমন অঘটন বেশ উদ্বেগজনক যে, দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতা পরিবার ও সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অসাড়তার দিকটাও স্পষ্ট করে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন এক জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০২২ সালে সারা দেশ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে এই জরিপ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। ২৭ জানুয়ারি অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এদের মাঝে শুধু মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। এরমধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৮৫ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬১ জন।
আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়- স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই এই পথ বেছে নেয় পরিবারের সমস্যদের উপর মান-অভিমানের কারণে। যেমন-কেউ হয়তো মোটরসাইকেল কিনতে চেয়েছে, সেটি না পেয়ে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। আবার কেউ হয়তো গেমস খেলতে চেয়েছে, তাকে বারণ করায় আত্মহত্যা করেছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, এই হার প্রায় ২৭ শতাংশের বেশি।
এ বয়সী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা করার দ্বিতীয় বড় কারণ হচ্ছে প্রেমঘটিত। প্রায় ২৩ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে প্রেমঘটিত কারণে।
এছাড়া পারিবারিক কলহ, হতাশা, মানসিক সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি, আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা আশানুরূপ ফল করতে না পারা, পড়াশুনার চাপসহ নানা কারণ রয়েছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা রোমান্টিক সম্পর্কে ব্যর্থ হওয়া এবং আর্থিক সংকটের কারণেই বেশি আত্মহত্যা করে থাকে।
আত্মহনন প্রবণতার ক্ষেত্রগুলোকে নানাভাবে চিহ্নিত করার সাথে পরিবারের অসাড়তার দিকগুলোও সামনে আনা প্রয়োজন। পরিবারগুলো প্রকৃতঅথেই পরিবার হয়ে উঠছে না কেন, এর সমস্যাই বা কী এমন নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি। নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দুর্নীতি ও সামাজিক দুবৃত্তায়নও সমাজবে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলছে। সমাজের দ্বান্দ্বিকতার সাথে অভিভাবকরা কতটা ধারণা পোষণ করেন? একই সাথে দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তারা তাদের সন্তানদেন প্রস্তুত করতে পারছে কি? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার ভঙ্গুর সম্পর্ক তো আছেই এ ছাড়াও সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও যে অতিব গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবিক পরিস্থিতিকে মানার প্রবণতা এবং একই সাথে সহিষ্ণু ও সহজবোধ্য আচরণ যা সন্তানদের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ- সেটার ঘাটতি ব্যাপকতর হচ্ছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবারের একে অপরের কাছে মেলে ধরতে না পারলে সম্পর্কটা বেশ দুর্বল হয়ে যায়। শুধুমাত্র দরিদ্রাবস্থাকে দোষারোপ করেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে হয় না। পরিবারের সকলে মিলে আনন্দ ও দুঃখকে, সাফল্য ও ব্যর্থতাকে ভাগ করে নেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অন্বীকার করা যায না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ