শিক্ষার মান

আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০১৬, ১১:৪৪ অপরাহ্ণ

শুভ্রারানী চন্দ
২৪/১০/২০১৬ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ অর্থাৎ উ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। অবাণিজ্য বিভাগের ৯০টি আসনের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মোট ৩,৮৭৮ জন পরীক্ষার্থী। এ সব অবাণিজ্য শাখার পরীক্ষার্থীরা মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী। যতদূর জানা যায়, ২৭/১০/২০১৬ তারিখ বুধবার গভীর রাতে উ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করলো সবাই এ ৯০ আসনের বিপরীতে ৩,৮৭৮ জন পরীক্ষার্থীর ভেতরে মাত্র ১৯ জন পরীক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি ইউনেটে পাশের হার ছিল ১৩%-এর কম।
আজকাল এসএসসি, এইচএসসি, বিএসসি জেএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষায় গোল্ডেন প্লাস জিপি এর ছড়াছড়ি। মাঝে মাঝে অবাক হই এই ভেবে ছেলে- মেয়েরা আজকাল এত ভালো ফল করছে, ওরা কত মেধাবীÑ ফেল করার তো প্রশ্নই নেই। অথচ একটা সময় ছিল ৬০% নম্বর অর্থাৎ ১ম বিভাগের ন্যূনতম নম্বর পেতে ছাত্র-ছাত্রীদের গলদধর্ম অবস্থা হতো। যদি আরো আগে যাই তাহলে দেখা যেতো একজন এসএসসি ফেল করা ছাত্রের জ্ঞান এখনকার একজন তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তির চেয়ে অনেকাংশে বেশি। এ নাজেহাল অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকাংশেই দায়ী এ দূরবস্থার জন্যে। ইদানীং আমরা দেখি পাশের হার শতকরা ৯৯-১০০ ভাগ। কিন্তু শিক্ষার মান সে তুলনায় নগন্য। একজন জিপিএ-৫ পাওয়া ছেলেকে খুব সাধারণ প্রশ্ন করলেও অনেক সময় ভড়কে যায়। এখন লেখাপড়া শেখার জন্য নয়, জ্ঞান আহরণের জন্য নয় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় খারাপ করাটা খুব স্বাভাবিক।
কেউ কেউ কারণ হিসেবে কঠিন প্রশ্নপত্রকে দায়ী করেন। কিন্তু বাস্তবতা এটাই ভর্তি পরীক্ষা- প্রশ্নপত্র এরকমই হয়। বড় ধরনের প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে যে ক’জন হাতে গোনা ছাত্রÑভর্তির সুযোগ পায় ক্লাশ নিতে গিয়ে বোঝা যায় তাদের মান কেমন। প্রতি ১০০ জন ছাত্রের ভেতরে ৫/৭ জনকে পাওয়া যায় যারা প্রকৃতপক্ষে মেধাবী। ১৫/২০ জন থাকে মোটামুটি ভালো। বাকিরা গড়পড়তা এবং কিছু থাকে একেবারেই অজ্ঞ। অবাক হই কিভাবে এরা সুযোগ পায়। হয় ভর্তি পরীক্ষায় কোন গলদ আছে। নয়তো বিশেষ কৌশল প্রক্রিয়ায় তারা সুযোগ পেয়ে যায়। স্কুল-কলেজের পড়া-শুনার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া-শুনার বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। শুধুমাত্র মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে কোন কোন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলেও আখেরে ফল ভালো হয় না। জ্ঞানচর্চা ও আহরণের বিশাল ক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়। শুধুমাত্র পড়া- লেখা করে কোথাও ভর্তি হয়ে একটা ভালো রেজাল্ট করলেই জীবন সার্থক হয় না।
কেউ কেউ বা মনে করেন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মুখস্থ বিদ্যা নির্ভর। এখানে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ কম। এটি যদি সত্যি হয় তাহলে এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরিই মুখস্থ নির্ভর। সৃজনশীলতার নামে যে সৃজনশীল পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে তাও মুখস্থ নির্ভর। কারণ, শিক্ষক যা বলবেন তার বাইরে শিক্ষার্থী কিছুই লিখতে পারবে না। এটা সৃজনশীলতার নামে প্রহসন বৈ কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে এখনকার শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের চিন্তার সুযোগ কম, বিনোদনের বালাই নেই। শুধু স্কুল, কোচিং আর প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেতে যেতেই ক্লান্ত হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এদের ভেতরে যারা একটু আলাদা সেটা নিজের বা পরিবারের সদস্যদের সহায়তায়। যারা ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মুখস্থ নির্ভর এর পক্ষে তাদেরকে জিজ্ঞাসা তাহলে কেন মাত্র ১৯ জন ছাত্র উ-ইউনিটে সুযোগ পেলো বাকীরা কেন নয়?
কারণ যেটাই হোক একটা বিষয় পরিষ্কার শিক্ষার মান ক্রমশঃ নি¤œগামী হচ্ছে। জিপিএ-৫ পাওয়ার চেয়ে তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীর ১০০% পাশের নীতি পরিহার করতে হবে। যোগ্যতা না থাকলেও ৭০% মার্ক দেবার বাধ্য-বাধকতা করা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার বোঝা শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তাদের আগ্রহ, সামর্থ ও মেধার জায়গাটি চিহ্নিত করে তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। মুখস্থ বিদ্যাকে নিরুৎসাহিত করে বুঝে পড়ার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে যে ঊীঢ়বৎরসবহঃ চলছে সেটা বন্ধ করা উচিৎ অচিরেই। নতুবা এর পরিণতি হবে আরো ভয়াবহ। এই ১৯ জন হয়ে যেতে পারে ১-০ জন। সেটা মোটেই কাম্য নয় কারো। সুতরাং, এখন থেকেই সকলকে সতর্ক হতে হবে।