শিক্ষা বঞ্চিত লাখো শিশু, গাজা যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে এক প্রজন্ম

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন শিক্ষাবর্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে সোমবার, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরার কোনও সুযোগ নেই গাজার শিক্ষার্থীদের। ১১ মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজার সব স্কুল বন্ধ। এমনকি যুদ্ধবিরতিরও কোনও লক্ষণ নেই।



যুদ্ধ চলতে থাকার মধ্যে ইসরায়েল গাজার বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে সরে যাওয়ার নতুন নতুন নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে।
উম্মে জাকিরের ছেলে ১৫ বছর বয়সী মোয়াতাজের এখন দশম শ্রেণিতে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধবিদ্ধস্ত গাজায় সে এখন বাস্তুহারা। দেইর আল বালার আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়ে আছে সে।

পাঁচ সন্তানের এক জননী টেক্সট মেসেজে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “সাধারণত এই দিনটিতে আনন্দ করার কথা ছিল। শিশুরা নতুন পোষাকে চিকিৎসক ও প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে। কিন্তু সেখানে আজ আমাদের শুধু একটাই চাওয়া, আর কোনও সন্তান হারানোর আগেই যেন যুদ্ধটা শেষ হয়।”

যে কোনো সমাজের মতো, গাজার ভবিষ্যৎ হচ্ছে সেখানকার শিশুরা। কিন্তু গাজায় শিশুরাই যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তু। এভাবে চলতে থাকলে তারা তাদের অধিকার পুরোপুরি হারিয়ে ফেলতে পারে।
ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি শহরে হামলা চালানোর পর গাজার সব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ স্কুল একেবারে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজায় এখনো যেসব স্কুল ভবন কিছুটা অক্ষত আছে সেগুলো বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।

সংস্থাটির যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট তৌমা রয়টার্সকে বলেন, “শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকবে তাদের শেখার ইচ্ছা তত কমে যাবে। শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাবে। তারা বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীতে নিয়োগের মতো শোষণের শিকার হবে। ফলে শেষ পর্যন্ত তারা একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মে পরিণত হওয়ার প্রবল ঝুঁকিতে পড়বে।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতোমধ্যে স্কুলে নিবন্ধিত ৬ লাখ ২৫ হাজার শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর ছয় বছর বয়সী আরও ৫৮ হাজার শিক্ষার্থীর এ বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল।
গত মাসে, ইউএনআরডব্লিউএ তাদের ৪৫ টি আশ্রয়কেন্দ্রে একটি ব্যাক-টু-লার্নিং প্রোগ্রাম চালু করেছে। সেখানে শিক্ষকরা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে সহায়তা করার জন্য গেমস, নাটক, অঙ্কন, সংগীত এবং ক্রীড়া কার্যক্রম শুরু করেছেন।

এর আগে, জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার (ইউএনডব্লিউআরএ) কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গাজায় চতুর্থবারের মতো ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে বলেছিলেন, “এখানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের ৫ লাখেরও বেশি শিশু আছে। কিন্তু মানুষের বাড়িঘর ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস হয়েছে। তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে আনা না গেলে শিশুরা স্কুলে ফিরে যাবে কি করে? তাই শিশুদের একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলেই আমি শঙ্কিত।”

গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাইকেই বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এর মধ্যেই জাতিসংঘ উত্তর গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের পোলিও টিকা দেওয়ার জন্য স্থানীয়দের উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রায় ২৫ বছরের মধ্যে গাজায় প্রথম পোলিও শনাক্ত হওয়ার পরে টিকাদান কর্মসূচির অনুমতি দেওয়ার জন্য যুদ্ধ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। যুদ্ধ স্থগিত রাখার লক্ষ্য হচ্ছে- গাজার প্রায় ৬৪০,০০০ শিশুর কাছে পোলিও টিকা নিয়ে পৌঁছানো সম্ভব করে তোলা।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় পোলিও টিকা অভিযান এ পর্যন্ত অর্ধেকেরও বেশি শিশুর কাছে পৌঁছেছে। প্রথম দফার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় দফার টিকা নিতে হবে।

পরে সোমবার ইউএনআরডব্লিউএ’র যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট তৌমা রয়টার্সকে বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় সাড়ে চার লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর গাজার হামাস গোষ্ঠী ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ছিটমহলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

Exit mobile version