রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিকারপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধের জন্য আবেদনকারী এক নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে অবৈধভাবে পুকুর খননকারী মো. আজিজুল হকের বিরুদ্ধে। আবেদনকারী ও লাঞ্ছিত হওয়া ওই নারী মোবারকপুর ইউনিয়নের শিকারপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আজমুল হকের স্ত্রী মোসা. সায়েরা বেগম। আর লাঞ্ছিতকারী অবৈধভাবে পুকুর খননকারী একই এলাকার মৃত. আবেসন মুন্নার ছেলে মো. আজিজুল হক।
অবৈধভাবে পুকুর খনন সরেজমিনে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের শিকারপুর মৌজার ১১৯৯ ও ১২০০ দাগের প্রায় ৫বিঘা সমতল জমিতে আমবাগান কেটে ফেলে পুকুর খনন করার জন্য ড্রেজার নিয়ে আসেন। বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে স্থানীয়রা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে অবহিত করলে ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে আসেন এবং ড্রেজারের যন্ত্রাংশ নিয়ে যান।
এরপর থেকে আবেদনকারী সায়েরা বেগমের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আজিজুল হক সহ তার অনুসারিরা ওই নারী ও তাঁর ছেলেকে গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) বেধড়ক মারধর করেন। এছাড়া ওই নারী সহ স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন আজিজুর হক ও তার অনুসারিরা।
অবৈধভাবে পুকুর খনন অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিকারপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামটি ঘনবসতি এলাকায়। এই এলাকায় মধ্যস্থানে একটি ছোট পুকুর রয়েছে। পুকুরটি সংস্কারের নাম করে আরো প্রায় ৫বিঘা সমতল জমি কেটে পুকুর বাড়ানোর প্রক্রিয়া করছে। ফলে পুকুরটি বৃদ্ধি হলে বসত বাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও এলাকাবাসীর দাবি। তবে, এই পুকুরটি আগামী ১০ বছরের জন্য আজিজুল হকসহ ৪জন প্রায় ২৯ লাখ টাকায় টেন্ডার নিয়েছে বলেও জানা গেছে। এরপর প্রেক্ষিতে সোমবার আজিজুল হক পুকুর খননের জন্য রাস্তা পরিস্কার করার লক্ষ্যে ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য নিয়ে রাস্তার স্থাপনার সরিয়ে ফেলাকালে একটি শিশু ফোনে ভিডিও ধারণ করে। পরে শিবগঞ্জ থানার এসআই মো. সোহেল রানা ওই শিশুকে চরথাপ্পর মারে এবং ফোনটি কেড়ে নেয়।
এদিকে, লাঞ্ছিত হওয়া ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, আমরা এই এলাকায় প্রায় ৫০/৫৫টি বাড়ি প্রায় ২০ বছর থেকে বসবাস করছি। দীর্ঘদিন বসবাস করার পর হঠাৎ করে এখানে নতুন করে সমতল জমি কেটে পুকুর করতে যাচ্ছে তারা। এখানে পুকুর হলে আমাদের চারপাশের বাড়ি-ঘর পুকুরে নেমে যাবে। এছাড়া আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা খেলাধুলা করতে গিয়ে পানিতে ডুবে যেতে পারে আশঙ্কা রয়েছে। পুকুর হলে রাস্তায় চলাচলের অনেক সমস্যা হবে। তাই আমি এলাকাবাসির স্বার্থে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)’র বরাবর আবেদন করেছিলাম যেনো এখানে অবৈধভাবে পুকুর খনন না করতে পারে। সেই সুবাদে আজিজুল হকের স্বার্থে ব্যঘাত হওয়ায় আমাকে ও আমার ছেলে মারধর করেছে। এছাড়া স্থানীয় বসবাসকারীরা একই অভিযোগ করেন।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার আজিজুল হক পুকুর খননের জন্য রাস্তা পরিস্কার করার লক্ষ্যে ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য নিয়ে রাস্তার স্থাপনা সরিয়ে ফেলাকালে ডালিম নামে সপ্তম শ্রেণি পড়–য়া একটি শিশু ফোনে ভিডিও ধারণ করে। পরে শিবগঞ্জ থানার এসআই মো. সোহেল রানা ওই শিশুটিকে চরথাপ্পর মারে এবং ফোনটি কেড়ে নেয়। শিশুটিও কাঁদতে কাঁদতে এই অভিযোগ করে। তবে, এসআই মো. সোহেল রানার দাবি, আমি ওই শিশুকে মারধর করিনি বরং ফোনটি নিয়ে প্রকৃত মালিককে না পেয়ে থানায় নিয়ে আসি এবং জিডি করে।
এ ব্যাপারে মো. আজিজুল হক বলেন, আমি নামাজ পড়ে বাসায় আসছিলাম। পথের মধ্যে আমাকে একা পেয়ে সায়েরা বেগম ও তাঁর ছেলে বিভিন্ন গালাগালিজ করে। পরে আমি প্রতিবাদ করলে তাঁরা আমাকে টানাহেঁচরা করে। এসময় আমাকে বিভিন্ন লাঠিসোঠা দিয়ে মারধর করে। আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি ও থানায় অভিযোগ করেছি। আমি তাদের মারধর করি নি। পুকুরটি টেন্ডার নিয়েছি. পুকুর খনন করবো। এতে যেই বাধা দেয় না কেনো তার মোকাবেলা করবো।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, কোনো পুলিশ সদস্য শিশু কিংবা কোনো ব্যক্তি মারধর করতে পারবে না। শিশুকে মারার অভিযোগটি কেনো করছে তা আমার জানা নাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেন জানান, উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিকারপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে পুকুর খনন করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং একটি ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেয়া হয়েছে। যদি আবারো ওখানে পুকুর খনন করতে কেউ যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া মারামারির ঘটনাটি আইনি বিষয়। এখানে আমার কোনো মন্তব্য নাই।