শিবগঞ্জে পদ্মার ভাঙ্গনে এক মাসে বিলীন ১৫০ বসতবাড়ি

আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০২৪, ১:১৮ অপরাহ্ণ


শিবগঞ্জ(চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা:


চলতি বর্ষা মৌসুমে মাত্র এক মাসের মধ্যে একটি গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হলো ১৫০ টি বসতবাড়ি এক হাজার আম গাছ, পাঁচ শো বিঘা ফসলি জমি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গ্রাামবাসীর মাঝে হাহাকার চললেও নেই কোন সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতার উদ্যোগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডেও আইয়ুব বিশ^াসের টোলা, দ্বোভাগী ঝালপাড়া ও পন্ডিতপাড়া গ্রামের মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে এখন অসহায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের মানুষ শুধু বাড়ি ঘর ভেঙ্গে অন্যত্রে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত। নারীরা শুধু নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হা হুতাশ করছে। তাদের চোখের পানিতে বুক ভেসে যাচ্ছে। এ সময় কথা হয় গ্রামের মৃত সানাউল্লাহর ছেলে বেলাল উদ্দিন (৭৫)এর সাথে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ৪০ বছরের মধ্যে ৫ বার ভাঙ্গনের কবলে পড়লাম। ৪০ বছর আগে চরহাসানপুর গ্রামে বাড়ি ছিল।

পদ্মার ভাঙ্গনে জমিজমা ও বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেলে সেখান থেকে কিছুটা দূরে কেবল বাস করার মত বাড়ি তৈরি করে বাস করছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস ৩০ বছর আগে সেটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আইয়ুব বিশ^াসের টোলায় বাড়ি ঘর তৈরি করে বাস শুরু করি। এখানেও এবার দিয়ে তিনবার ভাঙ্গনের কবলে পড়লাম। আমার জমিজমা, বাগান, বসতবাড়ি সবই ছিল।

তারপরও এখন আমি একজন নিঃস্ব। ঠাঁই গুজার মত স্থান নেই। পরের জমি বর্গা নিয়ে বাড়ি করে বাস করতে হবে। কিন্তু সেই সামর্থও নেই। মৃত তোজাম্মেল হকের স্ত্রী আলতারা বেগম (৭০) জানান, আমার হঠাৎ করে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে চার ছেলের বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার। মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে মোবারক হোসেন বলেন, ৩০ বছরে চারবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি।

আগে চরহাসানপুর গ্রামে বাড়ি ছিল। সেখান থেকে প্রথম ভাঙ্গন শুরু হয়েছিল। বর্তমানে সাহেবের ঘাট এলাকায় একখণ্ড জমি খুঁজছি। পেলে বাস করার মত ঘর তুলবো। মাহবুব আলাম জানান, ক্যাথাপাড়া ও মড়লপাড়া নামে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,আইয়ুব বিশ^াসের টোলা জামে মসজিদ ও মড়লপাড়া জামে-মসজিদ ও একটি ওয়াক্ত মসজিদ ইতোমধ্যে দুবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে।

বর্তমানে সাহেবের ঘাটে পুনঃস্থাপন করে কাজ চলছে। তিনি আরো জানান, গত এক মাসে প্রায় একশো বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ওই এলাকার শতাধিক পরিবারের একই অবস্থা। দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও গোলাম আজম ও ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সাইদুর রহমান জানান গত একমাসে ৯নং ওয়র্ডের আইযূব বিশ^াসের টোলা, দ্বোভাগী ঝালপাড়া ও পন্ডিতপাড়া মিলে প্রায় ১৫০টি বাড়িঘর, হাজার খানেক আম গাছ ও প্রায় ৫শো বিঘা ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

মানুষ ভীষণ কষ্টে আছে। ইতোমধ্যে একটি তালিকা দেয়া হয়েছে এবং ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আরিফুল ইসলাম জানান, ভাঙ্গনের ব্যাপার দেখার দায়িত্ব মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তবে দূর্লভপুর ইউপি হতে ক্ষতিগ্রস্ত ৯৮ জনের একটি তালিকা পেয়েছি। উর্দ্ধতন কতর্পৃক্ষের নিকটি পাঠানো হয়েছে।

আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা হবে। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, শুধু শিবগঞ্জ উপজেলার নদী ভাঙ্গন এলাকার জন্য স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধের ডিপিপি তে আবেদন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ