শিবগঞ্জে পান পাতায় ও পান গাছে ক্লোড ইনজুরী, ৫০জন পানচাষীর মাথায় হাত

আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৪, ৯:৫৬ অপরাহ্ণ


শিবগঞ্জ(চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা:


প্রায় ১৫ দিন যাবত কনকনে ঠান্ডা ও শৈত্য প্রবাহে পান ও পান গাছ ধ্বংসের পথে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে কানসাটের এই পানের। ফলে শিবগঞ্জের কানসাট ও মোবারকপুরে প্রায ৫০ বিঘা জমিতে চাষ করা ৫০ জন পান চাষীর মাথায় হাত। তাদের ভাষ্য হলো কনকনে ঠান্ডা ও শৈত্য প্রবাহের কারণে ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পান গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। পানের গায়ে লাল ও কালো দাগ পড়ার দুই একদিনের মধ্যে ঝরে পড়ছে। গোড়ায় পচন ধরা পান গাছ আস্তে আস্তে শুকিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

তাদের অভিযোগ হলো কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কোন অফিসার এ পর্যন্ত পানের বরজে (জমিতে) আসেনি এবং কোন পরামর্শও দেননি তবে কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পান চাষী কানসাট মিল্লিক মোড়ের শাকির আলী বলেন, বংশাণুক্রমিকভাবে প্রায় একশো বছর ধরে আমরা পান চাষ করে আসছি। কোনো বছরই এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইনি। আমার আড়াই বিঘা জমিতে দুইটি পানের বরজ আছে।

এপর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায আড়াই লাখ টাকা। প্রতি বছরই খরচ প্রায় একই হয়। কিন্তু পান বিক্রি করে পুঁজি বাদে লাভ থাক্ েযা দিয়ে সংসার ও ছেলেমেয়েদের পড়াশনার খরচ চলে। কিন্তু এবার লাভ তো দূরের কথা খরচও উঠবে না। কারণ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে কনকনে ঠান্ডা ও শৈত্যপ্রবাহে ছত্রাক জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পান গাছ মরে যাচ্ছে এবং পান গাছ থেকে পান ঝরে পড়ে যাচ্ছে।

কানসাট কলকলিয়া গ্রামের মাহিদুর রহমানের ছেলে কাদিরুল ইসলাম জানান, বিঘা প্রতি ২৫ হাজার দরে একবিঘা জমি আট বছরের জন্য বর্গা নিয়ে পান চাষ করে আসছি। প্রতিবছরই খরচ বাদে প্রায় এক লাখ টাকা লাভ হতো। তিনি বলেন, একবিঘা জমিতে দুইশো কেজি খৈল, অন্যান্য রাসায়নিক সার একমন ও বরজ (পানের মাচা) তৈরি করতে ও শ্রমিক সহ সব মিলিয়ে খরচ হয় বিঘায় এক লাখ টাকা। প্রতিবছরই খরচ বাদে মোটা অংকের টাকা লাভ হয়। কিন্তু এবার আমার মাথায় হাত। কারণ অতিরিক্ত কনকনে ঠান্ডা ও দীর্ঘদিন যাবত শৈত্য প্রবাহের কারণে পান ও পান গাছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পান ঝরে পড়ছে ও পান গাছ মরে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এপর্যন্ত অন্যান্য কৃষকের মত আমরা কোনো প্রণোদনা পাইনি। একই ধরনের অভিযোগ করলেন কানসাটের বিভিন্ন এলাকার পানচাষী লিটন আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মহিরুল ইসলাম শুকুল আলি, কেতু মন্ডল, আসতুর রহমান, নজরুল ইসলাম, মুনজুর আলী, রফিক উদ্দিন, সাইদুল ইসলামসহ অনেকেই।
তারা বলেন, আমাদের এখানে প্রায় ৫০ জন পানচাষী আছে। তারা সবাই এক ধরনের হতাশায় ভুগছে।

তবে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম ঢাকায় প্রশিক্ষণে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার সুনাইন বীন জামান পানচাষীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী কানসাটের পানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কানসাট ও মোবারকপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ পানচাষীদের সাথে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নিচ্ছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসার ড, পলাশ সরকার ও আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম একাধিকবার পানের বরজ প্রদর্শন করেছেন এবং দুটি প্রদর্শনী ক্ষেতও আছে। ১৭-০৫-২০২৩খ্রী: তারিখে কানসাট কলকলি গ্রামের শমসেরের ছেলে আতাউর রহমানকে প্রায় ২৫হাজার টাকা মূল্যের পান চাষের বিভিন্ন উপকরণাদি দেয়া হয়েছে। এবারও কানসাট ইউনিয়নের বাঘদূর্গপুর গ্রামের আরিফ উদ্দিনকে পানের চাষ করার জন্য প্রায় ২৫হাজার টাকা মূল্যের উপকরণাদি দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, শিবগঞ্জের কানসাট ও মোবারকপুরে মোট ২৯ জন পান চাষী আছে। পান চাষ হচ্ছে প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে। শতাধিক বছরের পুরাতন কানসাটের পানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পান চাষ সম্প্রসারণ ও উন্নত পান চাষের চেষ্টা করছি। উল্লেখ্য যে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার জমিদার কুঞ্চ রাজার জমিদারী এলাকার কানসাট ইউনিয়নের বাঘদুর্গপুর নালার দুই পাশে শত শত পানের বরজ ছিল এবং এখানকার উতপাদিত পান অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় ভারতীয় উপমহাদেশে কানসাটের পানের সুনাম থাকায় এখানকার উতপাদিত পান পাকিস্থানের করাচী, লাহোর ও ভারতে কলিকাতা, বাংলাদেশের ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা হতো। সে সময় কানসাট ও মোবারকপুর ইউনিয়নের জীবীকা নির্বাহের অন্যতম পন্থাই ছিল পান উতপাদন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ