শিবগঞ্জে প্রধান তিন নদীর বুক জুড়ে ফসলের সমারোহ!

শিবগঞ্জ(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)সংবাদদাতা:

শিবগঞ্জে তিনটি প্রধান নদী শুকিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এ নদীগুলো। বুক জুড়ে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। শতাধিক কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষের কাজে। প্রায় সারা বছরই কোন কোন ফসল ফলছে এ নদীগুলোর বুকে। নদীগুলো হলো চকের নদী, পাগলা নদী ও পদ্মা নদী। এই তিনটি নদীই এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর জমিতে চাষ হচ্ছে ধান, পাট, আলু, ভুট্টা, পিঁঁয়াজ, রসুন, গম, সবজি ও বিভিন্ন জাতের আম। নদীগুলো কেবলই কালের সাক্ষী হিসাবে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শিবগঞ্জের প্রধান নদী হলো পদ্মা। এক সময় যার অস্তিত্ব ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নে। যা ভারতের গঙ্গা নদীর থেকে মনাকষার পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। যা ১৯৬৫ হতে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত পদ্মা নদী নামে প্রবল খরস্রোতা নদী হিসাবে পরিচিত ছিল। তা বর্তমানে শুকিয়ে গিয়ে মরা পদ্মা নদী নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

বর্তমানে মূল পদ্মা হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণের স্রোতধারা। এ মরা পদ্মার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে ধান,পাট, ইক্ষু, ভুট্টা, গম, সবজি, চীনা শামা, কাইয়ান, আম ইত্যাদি। চাষে সেচের জন্য নদীর তলা জুড়ে বসানো হয়েছে স্যালো মেশিন।

দিয়াড় এলাকার মফিজুল হক জানান, এক সময় এ নদীটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। এ নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করেছে। শত শত জেলে মাছ ধরতো। ভাঙ্গনের কারণে হাজার হাজার হেক্টর জমি এ নদীতে বিলীন হয়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। এখন শুধু অতীত কাহিনী। শিবগঞ্জের আরো একটি নদী হলো পাগলা নদী। যা বর্তমানে মরা পাগলা নামে পরিচিত।

এ নদীটি সাম্প্রতিক কালে যদিও কিছুটা খনন করা হয়েছে, তবে খনন তেমন কোন কাজে আসেনি। শুধু মধ্যখানে একটি নালার মত দেখা যায়। এ নদীতে এক সময় বড় বড় নৌকা চলাচল করেছে। নদীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে, হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিওপি, পুলিশ থানা ও কিছু দর্শনীয় স্থান। শত শত জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন আর কিছু নেই। আছে শুধু পাগলা নদীর বুক জুড়ে নানা ধরনের ফললের সমারোহ।

নদী তীরবর্তী বাসিন্দা হাদিনগর গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, আমি পাগলা নদীর স্রোতের ভয়াবহতা দেখেছি যা বর্ণনা করতে গেলে এখনো গা শিউরে উঠে। এ নদীর গভীরতা এত বেশী ছিলো যে পাঁচমণী ও হাজার মণী নৌকা চলাচল করেছে। দূরদুরান্ত থেকে বণিকরা নৌকাযোগে ব্যবসা করতে আসতো। অনেকে শুধু নৌকা ভ্রমণেও আসতো। আমরা দেখার জন্য ভীড় করতাম। নদীতীরে গড়ে উঠেছে প্রায় চারটি বিওপি, প্রায় ৪/৫ টি বড় বড় হাট ও প্রায় ২০/২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখন নদী নেই বললেই চলে। নদীর বুক জড়ে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল, আম,জাম,লিছু সহ নানা ধরনের ফল। এমনকি নদীর বুক জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়ি ঘর।

অন্যদিকে উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম দিক দিয়ে ভারত থেকে প্রবেশ করা চকের নদী ছিল বিত্তশালী ও প্রভাবশালীদের চিত্তবিনোদনের স্থল। এ নদীকে কেন্দ্র করে অতীতে গড়ে উঠেছে মনাকষা, দাদনচক, তর্ত্তীপুল, জগনাথপুরসহ বড় কয়েকটি হাট, মনাকষা হাইস্কুল, দাদনচক হাইস্কুল, আদিনা কলেজ, শিবগঞ্জ কলেজ, সনাতন সম্প্রদায়ের তীর্থ স্থান তর্ত্তীপুর ঘাট, কয়েকটি শ্মশান ও কয়েকটি বিওপি।

প্রায় ৫০০মিটার প্রস্থ ও ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটি দিয়ে এ সময় বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। বর্তমানে এ নদীর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। নদীর বুক জুড়ে আবাদ হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ধান, পাট, ভুট্টা, আলু , গম, মসুর, মোটর কলাই সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ও বড় বড় আমের বাগান। অকার্যকর হয়েছে নদীর ওপর চারটি ব্রিজ। ব্রিজগুলির তলায় আবাদ হচ্ছে নানা ধরনের ফসল ও ফলজ গাছ।

নদীতীরের চাষী ভোগু মন্ডল জানান, চকের নদী এখন ফসলের মাঠ। নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। এ নদীর বুকের জমির উর্বরতা খুব বেশী। সবধরনের ফসলের ফলন খুব বেশী। উল্লেখ্য যে এ তিনটি নদীর হাজার হাজার হেক্টর জমি বর্তমানে বৈধ ও অবৈধ ভাবে ভূমিদস্যুদের কবলে।