শিবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে আপাতত রাস্তা বা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে বিএসএফ। বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাস্তা ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবির সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো পতাকা বৈঠকে এ সম্মতি জানায় বিএসএফ।
চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে গত সোমবার থেকে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। এ নিয়ে বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে চৌকা সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিজিবির সঙ্গে কোনো সমঝোতা ছাড়াই গত সোমবার বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করা নিয়ে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে বিএসএফের ১৩৯ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমঝোতা ছাড়া কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ থাকবে।
মঙ্গলবার রাতে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি বিকেলে সীমান্ত পিলার ১৭৭/২-এস থেকে আনুমানিক ১০০ গজ ভারতের ভেতরে চৌকা মাঠ এলাকার জিআর নম্বর ০৪৭৩৭২ এমএস ৭৮ ডি/২ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য ভারতের ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সবদেলপুর ক্যাম্পের উদ্যোগে মাটি খননের কাজ শুরু করা হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে বিজিবির চৌকা সীমান্তের টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সেই কাজে বাধা দেয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বিএসএফ আবার মাটি খননের কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে বিজিবি গিয়ে তৎক্ষণাৎ বাধা দেয়। তবে বিএসএফ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নির্মাণকাজ আবারও শুরু করে। কাজটি সম্পন্ন করার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক ও বিজিবির রাজশাহীর সেক্টর কমান্ডার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় বিএসএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএসএফ অতিরিক্ত জনবল ও বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজিবি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
সীমান্তে বাংলাদেশের ভূমি রক্ষায় স্থানীয় বাংলাদেশী নাগরিকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন এবং বিএসএফের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে বিজিবির সাথে তারাও দিনব্যাপী সীমান্তে অবস্থান নেয়। একইভাবে ভারতীয় নাগরিকদেরও বিএসএফের সাথে অবস্থান নিতে দেখা যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও উভয় বাহিনীই সর্তকাবস্থানে রয়েছে বলে জানান ৫৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।
চৌকা সীমান্ত এলাকার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, ইউপি সদস্য মো. বাদশা ও স্থানীয় লোকজন জানান, সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ করতে দেখে গত সোমবার সীমান্তের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা জড়ো হয়ে ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেন। এ সময় সীমান্তের ওপার থেকে ভারতীয় নাগরিকদেরও স্লোগান শোনা যায়।