রাবি প্রতিবেদক:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিবির সন্দেহ এক শিক্ষার্থীকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে ওই শিক্ষার্থীর সাথে শিবিরের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হলে এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষার্থী এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।
আটককৃত মো. আশিকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শাহ মাখদুম হলের ১২৯ নম্বর রুমে তার বরাদ্দ থাকলেও ৩৫১ নম্বর রুমে থাকতেন তিনি। তার বাসা কুড়িগ্রাম জেলায়।
তিনি ইসলামী সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্র হিযবুল্লাহ’ সাথে যুক্ত রয়েছে এমন অনেক আলামত তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত নামাজ কালাম পড়তেন বলেও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এলাহি শেখ বলেন, আমার কাছে টাকার বিনিময়ে সিট পরিবর্তন করতে এসেছিল ওই শিক্ষার্থী। সন্দেহজনক মনে হলে আমি তার ফোন বের করতে বলি। কিন্তু সে ফোন বের করতে রাজি না হওয়ায়, আমি জোর করে তার ফোন বের করি। পরে দেখি আমার সাথে তার সকল কথাবার্তা রেকোর্ডিং হচ্ছে। পরে আমি আমার অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে এ বিষয়ে অবগত করি।
শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিবিরের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট আছে কিনা এমন তথ্য পায়নি আমি। তবে ওই শিক্ষার্থী ইসলামী সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্র হিযবুল্লাম’ নামে এক সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ওই শিক্ষার্থী এই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতার কাছে গিয়ে টাকার বিনিময়ে সিট পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। সে ছাত্রলীগকে ফাঁসাতে সেই কথোপকথন রেকর্ড করছিল। ছাত্রলীগ সিট বাণিজ্য করে এমন তথ্য পাচার করতেই মূলত এসেছিল সে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাত্রলীগের নেতারা তাকে হল প্রভোস্টের কাছে নিয়ে যায়। পরে তল্লাশি চালিয়ে ওই ছেলে শিবির করে এমন তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
এ বিষয়ে শাহ মাখদুম হলের প্রভোস্ট ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই শিক্ষার্থীকে শিবির বলে অভিযুক্ত করছিল। তার জানমালের নিরাপত্তা দেখাও একজন প্রভোস্ট হিসেবে আমার কাজ। আমি সময় চেয়েছিলাম, ওই শিক্ষার্থী শিবির করে কিনা তদন্ত করে দেখার জন্য, কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তা মানতে নারাজ। ছেলেটার নিরাপত্তাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথেও আমি কথা বলেছি। কিন্তু ছাত্রলীগ মানতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে বলি আমি। তখন তারা এটাই করতে রাজি হয়। তবে আমাকে হল থেকে চলে আসতে বলেন তারা।
ওই শিক্ষার্থী শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা দাবি করছিল, শিবির করে। কিন্তু ১জন হল প্রভোস্ট হিসেবে তদন্ত না করে শিবির করে এমন কথা বলতে পারি না। আমি ছাত্রলীগের কাছে সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা মানতে নারাজ।
এ ব্যাপারে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোবারক পারভেজ বলেন, এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে, এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই ও ওই শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে আসি। তবে, এখনো শিবিরের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞেসাবাদ চলছে।