শিশুদের রক্ষায় আদালত ।। শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা বন্ধ হোক

আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০১৬, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

সমাজের বিধিবদ্ধ ব্যবস্থায় এবং এর বাইরে ব্যক্তি, পরিবারে ইচ্ছা-অনিচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার একটা প্রবণতা আছে। এটি আমাদের সংস্কৃতির ধারাবহিকতাও বটে। যারা ক্ষমতাসীন তারা আরোপ করতে চায় সমাজের ওপর, সংখ্যালঘুদের ওপর, নারী ও শিশুদের ওপর। আরোপ করার বিষয়টি সমাজে এক ধরনের রক্ষণশীলতার জন্ম দেয় যা অগ্রগতি ও উন্নয়নের অন্তরায়। এর ফল মুক্ত বুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রকে বাধাগ্রস্ত করে।
শিশুরা জাতির ভাবষ্যত। সেই কোমলমতি শিশুদের ওপরও আমরা অনেক কিছু চাপিয়ে দিই যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা সেই আরোপের বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করি। শিশুর সামর্থের বাইরে গিয়ে প্রত্যাশার এক ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হয়েছে- যা মানবিক বোধসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। এই বিপজ্জনক প্রতিযোগিতায় পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থাও চলে এসেছে। স্কুলমুখি প্রাইমারির শিক্ষার্থীদের দেখলেই আরোপের বিষয়টি খুবই স্থুলভাবে চোখে পড়ে। ঢাউস সাইজের ব্যাগে বিস্তর বইয়ের চাপে নুব্জ শিশুরা স্কুলে গিয়ে শিক্ষা নিচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য হতে পারে না। শিক্ষাটা তেমনই হওয়া উচিৎ, যেমনটি শিশুদের মত করে, শিশুদের মাপে হওয়া চাই। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ থেকে প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে কিন্তু নীতিনির্ধারকরা কোনোভাবেই প্রভাবিত হন নি। প্রাথমিক শিক্ষায় বইয়ের বাহুল্যতা, বিষয় বৈচিত্র লক্ষ্য করলে একটা প্রশ্ন মনে উদয় হতে পারে যে, যারা শিশুদের ওপর এসব চাপিয়ে দিচ্ছেন তারা কী কখনো শিশু ছিলেন না?
এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আদালত এগিয়ে এসেছেন শিশুদের রক্ষা করার জন্য। প্রাথমিকে শিশুর শরীরের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করতে ছয় মাসের মধ্যে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেইসঙ্গে ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন না করতে এবং করাতে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের সকল স্কুলে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত বছর জারি করা একটি রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেয়। হাই কোর্ট বলেছে, এই নির্দেশনা না মানলে কী শাস্তি বা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা সার্কুলারে উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি নির্দেশনা পালনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের কথাও সার্কুলারে থাকতে হবে।
এ সংকান্ত প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরকম এটি নির্দেশনার বড়ই প্রয়োজন ছিল। কেননা যে ভাবে শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা চলছে তার লাগাম টেনে ধরাটা খুবই সময়োপযোগী হয়েছে।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, পাঠ্যবইয়ের সহজবোধ্যতা শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা, যাতে তারা আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
শিশুর উন্নত ভবিষ্যত চিন্তা যদি চাপিয়ে দেয়ার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করলে উন্নত সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। বরং শিশুর প্রতি এক ধরনের নিরব সহিংসতাকেই আমরা সমর্থন করে যাবো। আর তা যে, ভবিষ্যত সমাজ জীবনের অস্থিরতারই প্রতিচ্ছবি হবে তা বলাই বাহুল্য। শিশুর সুন্দর ভবিষ্যতের মধ্যেই কেবল সুস্থ ও সুন্দর সমাজের প্রত্যাশা করা যায়। শিশুকে শিশুর মাপেই শিক্ষা দেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করতে চাই, উচ্চ আদালতের পথ ধরেই আমরা শিশুর উন্নত শিক্ষসেবা নিশ্চিত করতে পারবো।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ