মাহাবুল ইসলাম:রাস্তার আইল্যান্ডজুড়ে নান্দনিক ফুলের রাজ্য। আর রাস্তার পাশে কোথাও পলাশ-রুদ্রপলাশ, কোথাও শিমুল-স্বর্ণশিমুল, আবার কোথাও হিমঝুরি, ইউক্যালিপটাস, রক্তকাঞ্চন, নাগেশ্বর, পলক জুঁই, পাখিফুল, মণিমালা, মহুয়া, শাল, শিমুল, ক্যামেলিয়াসহ বসন্তের বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের রূপের ঝলক। পলাশ-শিমুল গাছে একটিও বড় পাতা নেই। আছে কচি কচি পাতা আর থোকায় থোকায় ফুল। যে ফুল কখনো বাতাসে, কখনো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে, আবার কখনো পাখিদের ঠোঁটের মায়াবী স্পর্শে পড়ছে ঝরে। আর এই ঝরেপড়া ফুলে ‘ফুলেল গালিচা’ তৈরি হচ্ছে সবুজ নগরীখ্যাত রাজশাহীর নগরীর অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক ও অলি-গলিতে। বিশেষ করে পদ্মাপাড়জুড়ে সৌন্দর্যের যে আভা তা কল্পনার রাজ্যের মতোই! আর সে রাজ্যের ফুলে ফুলে যেমন ভ্রমরের উল্লাস চলছে, তেমনি শিশুদের প্রাণ-উল্লাসও ঢের।
ঋতুরাজ বসন্তকে মহাসমারোহে নানা আয়োজনে বরণ করা হলেও সৌন্দর্য পিপাসুরা প্রতিমুর্হূতেই নানা আবেগ-ভালোবাসায় আগুনরাঙা ফাল্গুনকে উপভোগ করছেন। স্পর্শে, গন্ধে, আবেগে, ভালোবাসা ও বন্দনায় শিশুদের প্রাণ-উল্লাস ঢের মোহময়। এ এক অপার্থিব সৌন্দর্য! ফাগুনের ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাসে অল্প উড়ছে ঝরা পাতাগুলো। বৃক্ষের পদতলে কোথাও ধ্বনিত হচ্ছে পাতাঝরা ও ঝরাপাতার গান। কোথাও ঝরা ফুল-পাপড়ির গুঞ্জন। আর উঁকি দিচ্ছে নতুন কুঁড়ি। মধুময় কণ্ঠে পাখিরাও গাইছে গান। আর পদতলে দাঁড়িয়ে ঝরাপাতা মাড়িয়ে ফুল-পাপড়ি কুঁড়াচ্ছে শিশুরা। কেউ সে ফুল অতিযত্নে বাসায়ও নিচ্ছেন। কেউ মজা-উল্লাস ও মুগ্ধতায় হারিয়েও যাচ্ছেন।
যে রূপের বন্দনা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এভাবে করেছেন, ‘এলো বনান্তে পাগল বসস্ত/ বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।’ তবে রাজশাহী নগরীর পদ্মাপাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য ও শিশু উল্লাস স্ব-চক্ষে দেখলে কবির কণ্ঠে ও মনের বন্দনায় উঠতেও পারতো, ‘এলো নগর-বনান্তে পাগল বসস্ত/ বনে বনে, পদ্মার পাড়ে, মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল শিশু-তরুণ দুরন্ত।’
পড়ন্ত বিকেলে নগরীর টি-বাঁধ এলাকায় সায়ন্তী-সৌরিকও মেতেছিলো সে ফুলেল মুর্ছনায়। এ যেনো এক ফুলের সঙ্গে অন্য ফুলের আলাপন। ফুল, পাখি, কচিপাতা ও গুঞ্জন; পদ্মা, নৌকা ও বাতাস; সূর্যের লুকোচুরি, দিগন্ত প্রসারিত আকাশ ও মেঘের লুকোচুরি; গন্ধ, স্পর্শ, সায়ন্তী ও সৌরিক- এ এক অন্যন্য মিশ্রণ। যে মুগ্ধতা ছড়ানো মুহূর্তের প্রকৃত বহিঃপ্রকাশ শব্দের গাঁথুনিতে প্রকাশ অযোগ্য।
আর এ সৌন্দর্য উপভোগে শাসনের বারণ ভুলে ‘প্রশাসক’ বাবারও ছিলো না কোনো কার্পণ্য। স্বচ্ছন্দ্যেই এ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন বাবাও। স্মৃতির ফ্রেমে উজ্জ্বল রাখতে তুলেছেন ছবিও। যে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও জায়গা পেয়েছে।
সায়ন্তী-সৌরিকের বাবা অভিজিৎ সরকার। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন রাজশাহীর পবা উপজেলায়। তিনি বলেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থাকলেও দিনের কিছু সময় বাচ্চাদের জন্য রাখার চেষ্টা করি। যদিও সব সময় হয়ে ওঠে না। আর এই বসন্তে রাজশাহীর সৌন্দর্য, বিশেষ করে পদ্মাপাড়ের যে সৌন্দর্য তা সব বয়সী মানুষকে কাছে টানতে বাধ্য। আর শিশুদের মাঝে সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ সবসময়ই অনন্য। এর কোনো তুলনা হয় না।