বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
একে তোতা, গোদাগাড়ী
শীতের শুরুতেই বরেন্দ্র অঞ্চলের টমেটো উঠতে শুরু করেছে। আর ভালো ফলন ও দাম বেশি পেয়ে খুশি কৃষকরা। বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই ধান-গম চাষের পাশাপাশি অর্থকারী ফসল হিসেবে টমেটো চাষ হয়ে আসছে।
গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমের চেয়ে ৫০০ হেক্টর কম জমিতে টমেটো চাষ হয়।
কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলে প্রথম দিকে কয়েক বছর টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবাবন হওয়ায় পরের বছরগুলোতে টমেটো চাষ বাড়তে থাকে। কিন্তু মাঝের বছরগুলিতে ফলন ও দাম কমে যায়। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে টমেটো চাষ ছেড়ে দেয় অনেক কৃষক। তাই গত বছর থেকে টমেটো চাষ কমে গেছে। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টমেটোর গাছ, ফুল ও ফল ভালো আছে। বাজারে টমেটোর দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হবে বলে কৃষকরা জানান।
উপজেলার গোপালপুরের কৃষক মুরশেদ আলী দুই বিঘা জমিতে হাইব্রীড জাতের টমেটো চাষ করেছেন। তার প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। গত সপ্তা দুই বিঘা জমি থেকে টমেটো উত্তোলন করেছে ৮০ কেজি। পাইকারের কাছে প্রতি কেজি টমেটো (আধা পাকা) ৩০ টাকায় বিক্রি করেন। এই কৃষক জানান, প্রতি সপ্তা গাছ থেকে টমেটো সংগ্রহ করা যাবে। আর টমেটোর ফলন বেড়ে যাবে।
গোদাগাড়ী পৌর এলাকা মহিশালবাড়ীর কৃষক মোখলেসুর রহমান দেড় বিঘা জমি থেকে টমেটো উত্তোলন করেছেন ৩৫ কেজি। এই কৃষকও জমি থেকে ৩০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করেন। তার দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তিনি জানান, এবার ভালো ফলন পাওয়া যাবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষকৃত অধিকাংশই টমেটো জমিতে গাছে পাকে না। পরিপক্ক হওয়ার পর গাছ থেকে কাঁচা ও আঁধা পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করে খোলা জায়গা হরমন জাতীয় মেডিসিন স্প্রে করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাকানো হয়। এরপর পাকা টমেটো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নাটোর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।
কৃষকরা জানান, কাঁচা ও আঁধা পাকা টমেটো দাম প্রতি মণে ২০০ টাকা কম পাওয়া গেলও পাকা টমেটো দাম বেশি পাওয়া যায়। তবে এখন কাঁচা ও আঁধা পাকা টমেটো প্রতি মণে ১ হাজার ২০০ টাকা পেয়ে খুশি কৃষকরা। তবে টমেটো দাম এ ধরনের থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে। এ জন্য এখন ভারত থেকে টমেটো আমদানি বন্ধ করার দাবি জানান টমেটো চাষিরা। টমেটোর সরবরাহ বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমে যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গোদাগাড়ী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিকুর রহমান বলেন, টমেটোর ভালো বীজ রোপণ করা গেলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এবার বীজ তোলা তৈরির আগে থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে টমেটোর বীজ ও চাষ পদ্ধতির সম্পর্কে সচেতন করা হয়। আর এজন্য এবার ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। টমেটোর গাছে পোকামাকড় ও রোগবালাই কম দেখা দেওয়ায় উৎপাদন খরচ কমে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, পরিপক্ক টমেটো সংগ্রহ করে পাকানো গেলে ওই টমেটোতে পুষ্টিগুণ পুরোটাই পাওয়া যায়। গাছ থেকে পরিপক্ক টমেটো সংগ্রহের জন্য কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।