শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে পদ্মা, অস্তিত্ব সংকটে চাঁপাইয়ের আরও তিন নদী

আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৪, ৯:৫১ অপরাহ্ণ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:চাঁপাইনবাবগঞ্জে হাঁক ডাক দিয়ে পানি দিবস পালিত হলেও আগ্রাসী পদ্মা নদী এখন মরুর মতো ধু-ধু বালুচর। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও খানিকটা পানি নিয়েই তুলছে হচ্ছে তৃপ্তির ঢেকুর। উৎস ও উজান থেকে পর্যাপ্ত পানি না আসায় নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠছে বালু। খাঁ খাঁ করছে যৌবণা পদ্মা। আর পদ্মা পানি সংকটের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরও তিন নদী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নদী অববাহিকার লাখো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পদ্মা স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার অন্য কোনো বিকল্প নেই।

পদ্মায় বর্ষা মৌসুমে ৩ মাসের জন্য পানি থাকলেও বছরের ৯ মাসই তলানিতে থাকছে পদ্মা নদীর পানি। এ নদীতে ঘোলা পানি আর স্বচ্ছ পানির মায়াবী দৃশ্য আর নেয়। স্রোতহীন বয়ে যাচ্ছে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের সৃষ্টি হয়েছে।

পাগলা নদীর আগের পাগলামিও নেই। পূর্ণভবা নদীরও একই চিত্র। এসব নদীতে বর্ষার সময় কিছু পানি থাকলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নৌকা নয় চলে চাষাবাদ। ভারতের অংশে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার কারণে উত্তরাঞ্চলের এসব নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটে।

এবারও পদ্মায় মাস তিনেকের জন্য যৌবন এসেছিল। কিন্তু ফাল্গুন মাসেই নদীর পানি তলানিতে নামে। সামনে রয়েছে খরা মৌসুমে চৈত্র বৈশাখ। তখন ‘কি মরণ দশা হবে’ তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নদী তীরবর্তী মানুষের কপালে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতে। হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহানন্দা নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলিজমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে চর। স্থানীয় কৃষকেরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন ফসল।

স্থানীয় এক কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জমি মহানন্দা নদী ভাঙনে তলিয়ে যায়। পরে ১৯৭২ সালের জরিপে খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আর সংশোধন করা সম্ভব হয় নি। নদীতে চর এলাকায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষাবাদ করছি।’

সরেজমিনে দেখা যায়, পলি জমে ভরাট হয়ার কারণে এ মহানন্দা নদীর অস্তিত্বই এখন বিলীন হয়ার পথে। ভরাট হয়ে যায়া নদীর তলদেশে এখন গম, বোরো ধান, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছে কৃষকেরা। নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছে নদী চড়ের মানুষ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, উৎস থেকে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় পদ্মা নদীর গতিপথ বদলে গেছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে দুই কূল উপচে পড়ে, আবার শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে পানি থাকে না। প্রতি বছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। পদ্মা নদী তীর রক্ষায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। মহানন্দায় পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে রাবারড্যাম নির্মাণকাজ চলছে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য জারা জাবিন মাহবুব বলেন, ১৯৭৪ সালে পদ্মা পানি সংকট এর বিষয় একটি চুক্তি হয়। চুক্তিটা মুজিব ইন্দিরা চুক্তি হিসেবে পরিচিত। চুক্তি অনুসারে উজানের দেশ ভারত শুস্ক মৌসুমে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা। বিষয়টি বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের বিষয়। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিবগঞ্জ উপজেলার পাগলা নদী খনন করা হয়েছে। পাশাপাশি মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের কাজ চলতি বছরে শেষ হবে। এতে করে ৫৪ কিলোমিটার নদী অর্থাৎ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর সেতু থেকে ভোলাহাট মহানন্দা নদী পর্যন্ত ১৪ ফিট নেমে উপরে উঠবে। ফলে মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে আগের স্বরূপে ফিরে আসবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ