মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের নারীমুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ আজীবন আত্মত্যাগী বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (৮ এপ্রিল)। ২০০৯ সালের এই দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের মানবতাবাদী এ সমাজসেবী। তাঁর মৃত্যুর ২ ঘণ্টা পূর্বে বড় মেয়ে মাহফুজা রহমান পুতুল পাড়ি জমান পরপারে।
বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলে বেগম মনোয়ারা রহমান একজন অনুসরণীয় নারীনেত্রী। রাজশাহীর প্রখ্যাত আইনজীবী ভাষাসৈনিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট মাদার বখশের প্রথম সন্তান হিসেবে মনোয়ারা রহমান আজীবন নিজ পিতাকে অনুসরণ করেছেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের রাজশাহী জেলা গভর্নর জননেতা এম আতাউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে গণমানুষের মুক্তি সমৃদ্ধির জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে গেছেন। তাঁদের মতো আত্মত্যাগী সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মানবমুক্তির ইতিহাসে বিরল। অনন্ত মাতৃত্বের গৌরবধন্য মাদার বখশের স্নেহময়ীরূপ ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের চরিত্রে পূর্ণতা পেয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের সময় তিঁনি ছিলেন ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। রাজশাহীর সচেতন নারী ও পিএন গার্লস স্কুৃলের ছাত্রীদের নিয়ে মনোয়ারা রহমান অগ্নিশিখা মিছিল বের করেন। ছাত্রী জীবনে তিঁনি ছিলেন অধিকার সচেতন। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় অত্যাচার ও দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। রাজশাহী কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
গণমানুষের মুক্তির রাজনীতি মানবপ্রেম ছিলো তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। ৫২, ৫৩, ৫৪ সালে বেগম মনোয়ারা রহমান সারাদেশে এক আলোচিত নাম। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ ও জাতি গঠনে সমাজসেবার ক্ষেত্রে তিঁনি বিগত ৪০ বছর ধরে নারী সমাজের উন্নয়ন, নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, শিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ নিঃস্বার্থভাবে অনন্য অবদান রেখে গেছেন।
রাজশাহী মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিঁনি পবা, মোহনপুর, চারঘাট, তানোর, গোদাগাড়ীসহ অত্র অঞ্চলের গবাদিপশু ও মৌমাছি পালন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপনসহ বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিঁনি ১০ হাজারেরও অধিক নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। অসহায় নারীদের সেলাই, বুটিক, এম্ব্রোডারি ও চামড়ার উপর কারুকাজ, তাঁতশিল্পে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনে তিঁনি একক ভূমিকা পালন করেন।