শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক:
আদতে শুষ্ক, বৃষ্টিবিরল এলাকাগুলিই মরুভূমি। বালি দিয়ে আবৃত প্রায় পুরো এলাকা। স্বাভাবিক গাছপালার অস্তিত্ব প্রায় নেই-ই। মরুভূমিতে একটা মরুদ্যান খুঁজে পাওয়া বিরল। পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারাও এমনই একটা মরু এলাকা। কিন্তু এখানেই একসময় নাকি ছিল সবুজ উদ্যানে ভরপুর, বৃষ্টিস্নাত এলাকা, তিরতিরিয়ে প্রবাহমান নদী! সাহারা মরুভূমি নিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি গবেষণায়।
গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তনের ফলে একসময়ে সবুজ ও আদ্র এলাকা ছিল সাহারা মরুভূমি। একটি নতুন গবেষণা গত ৮ লক্ষ বছরে সাহারা মরুভূমির পর্যায়ক্রমিক সবুজায়নের চিত্র তুলে ধরেছে। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত গবেষণাটি প্রকাশ করে যে, উত্তর আফ্রিকার যে অঞ্চলে সাহারা মরুভূমি অবস্থিত, তা আসছে ছিল সবুজ বনাঞ্চল। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তন ফলে তার প্রকৃতি বদল হয়ে যায়।
হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. এডওয়ার্ড আর্মস্ট্রংয়ের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি সাহারার ‘সবুজায়নে’র বিষয়টি সামনে আনে। ড. আর্মস্ট্র্ং বলেন, “সাহারা মরুভূমির সাইক্লিক রূপান্তর সাভানা এবং উডল্যান্ড ইকোসিস্টেমে গ্রহের সবথেকে উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি। এই গবেষণায় প্রথমে জলবায়ু মডেলিং অধ্যয়ন করা হয়। আফ্রিকান আর্দ্র সময়কালকে তুলনীয় মাত্রার সঙ্গে অনুকরণ করে প্যালিওক্লাইমেট পর্যবেক্ষণগুলি নির্দেশ করে, কেন এবং কখন এই ঘটনাগুলি ঘটেছে।”
ঐতিহাসিকভাবে সাহারায় একসময় গাছপালা ছিল। সেখানে নদী, হ্রদ ছিল। জলজ প্রাণী ছিল। কিন্তু তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আনুমানিক ২১ হাজার বছরের ঋতুচক্রকে প্রভাবিত করে পৃথিবী তার অক্ষ বদল করে। এই পরিবর্তনগুলি বিভিন্ন ঋতুতে পৃথিবী দ্বারা প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ নির্ধারণ করে। ফলস্বরূপ আফ্রিকান বর্ষা ও এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে গাছপালা বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করে। উত্তর গোলার্ধে উষ্ণ গ্রীষ্মের সৃষ্টি হয় ক্রমশ। পশ্চিম আফ্রিকার মৌসুমী প্রণালী তীব্র হতে থাকে। সাহারান বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির ফলে মরুভূমিজুড়ে সাভানা-জাতীয় গাছপালা ছড়িয়ে পড়ে।
গবেষণাটি আরও প্রকাশ করেছে, আর্দ্র সময়কাল বরফ যুগে ঘটেনি, যখন বড় হিমবাহী বরফের শিট বায়ুম-লকে শীতল করে এবং আফ্রিকান বর্ষা ব্যবস্থাকে দমন করে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-লেখক অধ্যাপক পল ভালদেস বলেছেন, “আমরা গবেষণার ফলাফল নিয়ে সত্যিই উচ্ছ্বসিত। আমাদের সংশোধিত মডেলটি সফলভাবে অতীতের পরিবর্তনগুলিকে দেখিয়েছে। আমাদের ভবিষ্যত পরিবর্তন বোঝার ক্ষমতার প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে এই গবেষণা।”
তথ্যসূত্র: আজকাল অনলাইন