শ্রমিক অসন্তোষ: পোশাক খাতে ‘১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল’

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ৪:৪০ অপরাহ্ণ

টানা শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে বুধবার গাজীপুরে বিসবস নামে একটি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়া হয়।

সোনার দেশ ডেস্ক :


তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ক্রমাগত বিক্ষোভে ৫০টিরও বেশি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য এবং প্রতিদিনই বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্যে পোশাকের কার্যাদেশ বাতিল যাওয়ার তথ্য দিল অন্তর্র্বতী সরকার।

শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য দিলেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ”শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রতিদিন বসছে। গতকালও (বুধবার) আমরা ৬ জন উপদেষ্টা বসেছিলাম। গতকাল একটি বড় কোম্পানি বেতন দিতে না পারার কারণে গাজীপুর-আশুলিয়ায় অসন্তোষ হয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে।

“সেখানেই বসে থেকেই আমাদের অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে কথা বলে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৯ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। সে কারণে আজকে শ্রমিক অসন্তোষটা কিছুটা কম রয়েছে।“

ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠী নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। পোশাক ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে নানা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের তরফে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়।

তবে এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। এর মধ্যে সাভার ও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় উসকানির অভিযোগে নেত্রকোণা থেকে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়, পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া হলেও পরে ফেইসবুকে সেই যুবকের ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় তিনি নিজেকে বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিত সামরিক কায়দায় সালাম দিচ্ছেন।

বুধবার গাজীপুরে বেক্সিমকো গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এর মধ্যে বিগ বস নামে অন্য একটি পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

হঠাৎ শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে কী?
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিবিড়িভাবে মনিটর করছি। যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্য একটি পর্যালোচনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, মালিকপক্ষ ও দুজন আইনজীবীও রয়েছে। এই কমিটি শ্রম ভবনে বসবে। আমরা শ্রমিক ভাইদের আহ্বান জানাব কোনো অভিযোগ থাকলে সেখানে জানানোর জন্য।”

শ্রম আইনের মধ্যে যেসব সমস্যা সমাধান করা যায় সেটার উদ্যোগ নেওয়া হবে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে। শ্রমিকদের প্রকৃত সমস্যার সমাধান আমরা দিতে পারব।”
বিদেশি ষড়যন্ত্র?

শ্রম কর্মসংস্থান সচিব দাবি করেছেন শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে এমন কিছু তথ্য পেয়েছি যেটা ওই বিষয়টিই ইঙ্গিত করে। এটা একটি সিজনাল বিজনেস। মার্কেটে যে প্রডাক্ট যাবে সেটা তিন মাস আগেই প্রস্তুত করতে হয়। সেই অর্ডারগুলো অনেক জায়গায় বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

“আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু নির্দিষ্ট দেশের ব্যবসায়ীরা অর্ডারটা নেয়ার জন্য লবিং করছেন, উঠে পড়ে লেগেছে।”
দ্রুত সময়ের মধ্যে অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে আশা করে তিনি বলেন, ”একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো শ্রমিক তার কারখানায় এভাবে হামলা করবে না। কারণ, কারখানা বন্ধ হয়ে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু শ্রমিকরাই হন। তিনি জানেন কারখানা বন্ধ হলে মাস শেষে তিনি বেতনটি পাবেন না।”

কোন শ্রমিক কোনো কারখানায় হামলা করেছে এমন খবর পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, “বরং দেখেছি বেকার যুব সংঘের নামে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে হামলার চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরাই তাদের প্রতিহত করেছেন।”

নেত্রকোণা থেকে গ্রেপ্তার করা যুবককে ‘ছাত্রলীগের পদধারী’ দাবি করে উপদেষ্টা বলেন, “কাজেই এখানে ষড়যন্ত্র যেমন আছে, শ্রমিকদের প্রকৃত দাবিও কিছু রয়েছে। কারণ, দীর্ঘ ১৬ বছর তারা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় তারা কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছে। আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাই।

‘পদ্ধতির মাধ্যমে দাবিগুলো আমাদের কাছে আসলে তার সমাধান করব। কিন্তু কারখানার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই এমন বহিরাগত ও ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যারা অসন্তোষ সৃষ্টি করছে ও শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে, সরকার তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ