মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৭ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
শ্রম আদালতে বছরের পর বছর চলমান মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। শ্রম আদালত ছাড়াও উচ্চ আদালতে চলমান রিট মামলাগুলো মনিটরিং করতে কম্পিউটারাইজড ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। একইসঙ্গে মামলা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) সফটওয়্যার তৈরিতেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেতন-ভাতার পাওনা আদায়, চাকরিতে পুনর্বহাল ও ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে দেশের শ্রম আদালতগুলোতে মামলা করেন শ্রমজীবীরা। মালিক-শ্রমিকের এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে রয়েছে একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ও ১০টি শ্রম আদালত। খুব শিগগিরই আরও তিনটি শ্রম আদালতের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এরপরও নানা জটিলতায় আদালতগুলোতে হাজার হাজার মামলার জট লেগে আছে। বর্তমানে দেশের শ্রম আদালতগুলোতে প্রায় ২৪ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মামলা রয়েছে ২১৯টি। এরমধ্যে ৬৭টি মামলার রায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে সরকারের পক্ষে রায় হয়েছে ৫৮টি ও বিপক্ষে রায় হয়েছে ৯টি মামলার। শুনানির পর্যায়ে রয়েছে ১৫২টি মামলা। অপরদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের রিট মামলার মনিটরিং সিস্টেমে শ্রম অধিদফতরের ১৫৫টি মামলার তথ্য অ্যান্ট্রি দেওয়া আছে। যার মধ্যে ১৪১টি মামলা শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
শ্রম আদালতের প্রধান বিচারককে বলা হয় চেয়ারম্যান। যিনি জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক। মামলার সিদ্ধান্ত দেওয়ার দিন অতিরিক্ত আরও দুজন সদস্য বা বিচারক থাকেন এজলাসে। সেখানে দুপক্ষই আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করে থাকেন। শ্রম আদালতের মামলাগুলো ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও নানা কারণে সেটা হচ্ছে না। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করে আরও ৯০ দিন সময় বাড়ানো যায়। দেশের শ্রম আদালতগুলোতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ঢাকায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যায়।
শ্রম আদালতগুলোতে মামলার শুনানির জন্য ধার্য তারিখ হয় বছরে তিন থেকে চারবার। ফলে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এতে অনেক শ্রমিকই মালিক পক্ষের সঙ্গে আপস মীমাংসায় যেতে বাধ্য হন। আর তখনই কেবল মামলা কিছুটা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। এজন্য শ্রম আদালতের সংখ্যা কম হওয়াকেও দায়ী করেন অনেকে।
তাই ঝুলে থাকা মামলা দ্রæত নিষ্পত্তিতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোরও উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। এরমধ্যে তিনটি নতুন শ্রম আদালত গঠন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কুমিল্লায় যে নতুন তিনটি শ্রম আদালত গঠন করা হয়েছে, সেখানে দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে মন্ত্রণালয় থেকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আরও সাতটি শ্রম আদালত গঠন, পদ সৃষ্টি এবং যানবাহন ও অফিস সরঞ্জামাদি সরকারি দফতরের সাংগঠনিক কাঠামোতে (টিওঅ্যান্ডই) অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অসম্মতির বিষয়টি পর্যালোচনা করে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, পাবনা ও নোয়াখালী জেলায় নতুন সাতটি শ্রম আদালত গঠনের জন্য আইন ও বিচার বিভাগ ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিটি শ্রম আদালতে ১৪টি করে মোট ৯৮টি পদ সৃষ্টি এবং যানবাহন ও অফিস সরঞ্জামাদি টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাতে অসম্মতি জানায়। এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শ্রম আদালতে মামলার জট লেগে থাকার মূল কারণ হচ্ছে— শ্রম আদালত পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে সময় না দেওয়া। আদালতের বিচারক ছাড়াও যারা সদস্য থাকেন, তাদেরও অনেকে নানা ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারেন না। এসব বিবেচনায় নিয়ে শ্রম আদালত গঠন করতে হবে। তাছাড়া মামলার জট কমাতে আইন ও শ্রম মন্ত্রণালয় কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। তাহলেই শ্রম আদালতের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে।’
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় ও আদালত অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. মহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলা দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য আমাদের একটা প্ল্যান আছে। আমরা চেষ্টা করছি। এজন্য একটি ডাটাবেজ করার চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, ‘শ্রম আদালতের মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য ইতোমধ্যে আমরা সব শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটা ওয়ার্কশপ করেছি।
যেখানে শ্রমমন্ত্রী, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইনমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা এবং অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেই ওয়ার্কশপের পর আমরা কিছু সুপারিশও করেছি। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে চেয়ারম্যানরা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমরা খুব তাড়াতাড়ি এসব জিনিস সমাধান করতে পারবো। প্রয়োজনে আবারও তাদের নিয়ে আমরা বসবো।’
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন