মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
নির্বাচনী ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে বিএনপি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও তা আমলে নিতে নারাজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলছেন, এই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠেয় সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব প্রস্তাব দেবে, সেখান থেকে কিছু নেওয়ার মতো হলে বিবেচনা করবেন তারা।
মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির প্রতিক্রিয়াকে সিইসি বর্ণনা করেন দলটির ‘রাজনৈতিক ভাষ্য’ হিসেবে।
“দলগুলোর অনেক হিসাব-নিকাশ থাকে। আমাদের রোডম্যাপ নিয়ে ভালো-মন্দ সমালোচনা অনেকে করবে। তাদের সঙ্গে তো দেখা হবে সংলাপে। এখন যা-ই বলুক না কেন বিস্তারিত বক্তব্য সংলাপে শুনব। সে সময় যা পরামর্শ আসবে, তা ভালোভাবে গ্রহণ করার মতো হলে আমরাও নেব।”
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রোববার দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
এর অংশ হিসেবে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস, আইন সংস্কারসহ অন্তত সাতটি বিষয়ে আগামী ৩১ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সূচি রয়েছে ইসির।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এবার নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে তার বিকল্প নেই বলে মনে করছে দলটি।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণার সময় সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর ইসির কাজে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তফসিল ঘোষণার আগে কমিশনের করার কিছুই থাকে না।
তার ওই বক্তব্যে হতাশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই রোডম্যাপে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে পুরনো কায়দায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার নীলনকশার বাস্তবায়নে তাদের যাত্রা প্রক্রিয়া শুরু করল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।”
অপরদিকে নির্বাচনী রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে দলটির সাধারণ সম্পাদকওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এ ব্যাপারে এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যে বক্তব্য সেটা হচ্ছে, এই রোডম্যাপটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে আমরা কথা বলব। তারা যা বলেছেন তা রোডম্যাপ, আমরা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা দেখতে চাই।”
‘রোডম্যাপ’ খারিজ করলেও নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়ার বিষয়ে এখনও নেতিবাচক নয় বিএনপি। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেছেন, “যখন সংলাপ হবে, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
এতেই নির্বাচন আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ নিরসনের আশা দেখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করব। রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির উদ্দেশ্যে কথা বলে, তাদের বক্তব্য রাজনৈতিক।”
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া ইসির কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি সব সমালোচনাকেই স্বাগত জানাই। কারণ সমালোচনা হলো সাহায্যকারী। কোনো ভুল থাকলে শোধরানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।
“যে কোনো সমালোচনা কাজের নতুন দিক উন্মোচন করে। কারও কথায় ভালো পরামর্শ এলে তা আমরা আলোচনা করে দেখব।”
সংলাপের আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি তাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে।
যোগাযোগের সুবিধার জন্য গত ১২ জুলাই নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে একজনের নাম চেয়েছিল কমিশন। এর জবাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মঙ্গলবার ইসি সচিবকে চিঠি দিয়ে তাদের ‘ফোকাল পয়েন্টের’ নাম-ঠিকানা জানিয়েছে।
দলগুলোকে বুধবারের মধ্যে নাম-ঠিকানা দিতে বলা হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪০টি দলের মধ্যে কেবল দুই দলের তথ্যই ইসির হাতে এসেছে।
এছাড়া দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পূরণের অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে ১৬টি দল।
গত ১৩ জুন ৪০টি দলের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিল ইসি। এক মাসের মধ্যে দলগুলোর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল।
মঙ্গলবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, খেলাফত মজলিস, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-জেপি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট তাদের অগ্রগতি জানিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলগুলো ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।
নির্ধারিত সময় পার হলেও অধিকাংশ দলের সাড়া না মেলায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বিষয়টি কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ