বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
মো. আব্দুল আজিজ সৌখিন
একটি রাষ্ট্রের যে চারটি মূলনীতি রয়েছে তার মধ্যে জনসমষ্টি অন্যতম, কিন্তু এই জনসমষ্টি বা জনগণ একটি রাষ্ট্রের জন্য কখনো আর্শিবাদ স্বরূপ আবার কখনো অভিশাপ হিসেবে আবির্ভুত হয়। একটি রাষ্ট্র বা দেশের জনগণ তখনই অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয় জনগণ ওই নির্দিষ্ট পরিমান জনগণকে সঠিকভাবে কাজে লাগতে না পারা যাই ও সঠিক পরিকল্পনা মাফিক পািরচালিত না করা যাই, কিন্তু যদি এই নির্দিষ্ট পরিমান জনগোষ্ঠিকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টির করে দেওয়া যাই তখন তা সম্পদে রুপান্তরিত হয়। অনেক রাষ্ট্র যেখানে শ্রমিকের অভাবে বাংলাদেশ সহ বেশ কিছু রাষ্ট হতে শ্রমিক আমদানি করছে। অথচ বাংলাদেশ সেখানে তার জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সমসাময়িক সময়ে যে সমস্ত দেশ স্বাধিনতা লাভ করেছে সেখানে আজ আমরা শ্রমিক রপ্তানি করছি, কিন্তু নিজের দেশে শ্রম বাজার বৃদ্ধি করতে সম্পূর্ণ রুপে সক্ষম হচ্ছিনা। তাই বলে বিদেশের বাজারে শ্রম রপ্তানিকে যে আমি অবহেলা করছি ঠিক তা নয়, এটার ও প্রয়োজন আছে। কিন্তু বাংলাদেশে পর্যাপ্ত শ্রম বাজার না থাকাই বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও মেধাবিরা বিদেশ গিয়ে সেখানে থেকে যাচ্ছে, ফলে কৌশলগত ভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে আমাদের মেধা। জাতি ও দেশ হারাচ্ছে শত শত মেধাবী সন্তান।
কিন্তু আমরা ইচ্ছা করলেই আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে সমস্যা হিসেবে না দেখে সম্ভাবনা হিসেবে দেখতে পারি। আমরা যদি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তথ্য প্রযুক্তিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারি তবে জনসংখ্যা সমস্যা সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে আশার দিক হলো বর্তমান সরকারের সময় উপযোগি পদক্ষেপের ফলে জনসংখ্যা সমস্যাটি অভিশাপ না হয়ে আর্শিবাদ হিসেবে দেখা দিতে শুরু করেছে। আজ গ্রামে গ্রামে বাড়ছে শিক্ষিত লোক, বাড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য, বাড়ছে ডাক্তার, প্রকৌশলীয় সংখ্যা, পাশা পাশি বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। ঢাকার বাইরেও স্থাপন হচ্ছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা যেখানে সৃষ্টি হচ্ছে দেশের হাজারো বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থান। একটা কথা আমাদের সর্বদাই স্বরণ রাখতে হবে যে এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে যদি আমরা সম্ভাবনা হিসেবে দেখে জনসম্পদে রুপান্তর করতে চাই তবে আমাদের ব্যপক হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আর এক্ষেত্রে সরকরের ওঈঞ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। তাছাড়া, দ্রুত নগরায়ন, শিল্পায়ন, শিক্ষা, সড়ক ও অবকাঠামো হত উন্নয়নের ফলে দিনে দিনে নিরসন হচ্ছে বেকার সমস্যা। দেশে এখন প্রতি বছর ২২ লাখ লোক চাকুরির বাজারে প্রবেশ করেছে।
দেশে এখন প্রায় ৬কোটির বেশি লোক কর্মক্ষম, তাছাড়া দিনে দিনে কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে নারীদের অংশগ্রহণ। যা আমাদের জন্য জনসংখ্যা সমস্যাকে মোকাবেলা করতে আর্শিবাদ স্বরূপ হিসেবে দেখা দিয়েছে।সমাজে যে নারীরাও অবদান রাখতে পারে তা আজ থেকে অনেক পূর্বেই নজরুলও বলেছিলেন,যা আমরা সবাই জানি ‘পৃথিবীতে হয়েছে যাহা চিরকল্যান কর অর্ধেক তাহার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। দিনে দিনে বাড়ছে মানুষের গড় আয়ু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে (১৯৭৩-৭৪) সালে যখন গড় আয়ছিল ৫০.৭ বছর এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৭০ বছর। পাশা পাশি বাংলাদেশ সহ সারা বিশে^ বাড়ছে জনসংখ্যা, কিন্তু বাড়ছে না আমাদের আবাদি জমি। আর তাই এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যাকে কর্মক্ষম হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন সময় উপযোগী পদক্ষেপের। যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। বাড়ছে নতুন নতুন উদোক্তার সংখ্যা। ফলে সবাই নিজেরাই স্বাবলম্বি হবার চেষ্ট করছে। কমে আসছে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা। মানুষ এখন ঝুকছে কারিগরি, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকে। ফলে একদিকে বাড়ছে শিক্ষার হার আর অন্যদিকে বাড়ছে হাতে-কলমে কাজের দক্ষতা। এক তথ্য অনুযায়ি ২০১৪ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার হারছিল ৫৮.৬ শতাংশ। যা বর্তমানে বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০ শতাংশের ও বেশি। বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ সচেতন হয়েছেও আগের থেকে অনেক বেশি। যা কেবল সম্ভব হয়েছে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তর করার প্রক্রিয়ার ফলে ।
কেননা মানুষের পেটে যদি ভাত না থাকে তবে সে কোন কিছুই করতে চাইবেনা, মারা যাবে না খেয়ে, দেশে সৃষ্টি হবে দুর্ভিক্ষ। তবে এখনো আমরা আমাদের সমস্ত জনগোষ্ঠিকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে পারিনি। যার ফলৈ সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাহিত্য ও নানা খাতে পরিলক্ষিত হচ্ছে কিছু ক্ষতিকর দিক। যার ফলে কমছেনা বেকারের সংখ্যা বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। কিন্তু আমরা ইচ্ছা করলেই ও যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলেই এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠিকে করতে পারি জনসম্পদে রুপান্তর। আর রোধ করতে পারি, এই জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান। আমরা যদি নিন্মোক্ত বিষয় গুলো প্রতি লক্ষ রাখি তবে হয়তো আমরা অতি দ্রুতই এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে পারবো।
ক্স পরিকল্পিত পরিবার গঠন। ২. নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি। ৩. নি¤œ স্তর থেকে উচ্চ স্তর পর্যন্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ খাতের সঠিক মানউন্নয়ন। ৪. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি। ৫. ওঈঞ শিক্ষার প্রসার । ৬. মা ও শিশু স্বাস্থ সেবা নিশ্চিত করা। ৭. বাল্য বিবাহ রোধ করা। ৮. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্প গ্রহণ । ৯. কারিগরি , কর্মমুখী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি জোর দেওয়া। ১০. হাতের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি মূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা । ১১. প্রতিবন্দ্বিদের প্রতি বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া। ১২.বিদেশের বাজারে দক্ষ শ্রম শক্তি রপ্তানি করা । ১৩. জেলা শহরগুলোতে শিল্প কারখানা স্থাপন কর। ১৪. বিভিন্ন অঞ্চলে ভূ-প্রভৃতি অনুসারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।১৫. নতুন নতুনউদ্যেক্তা তৈরী করা, এজন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা।১৬. সর্বপরি জনসাধারনের মাঝে নৈতিক মান উন্নয়ন করা।
আর আমরা যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো উপর লক্ষ্য রেখে জনসংখ্যাকে জনসম্পদের রূপান্তিত করতে পারি তবে আমরা নানা ধরনের সুফল ভোগ করতে পারবো যার মধ্যে অন্যতম হলো-
ক্স খাদ্যে স্বয়:সম্পূর্ণতা বৃদ্ধি । ২. শিল্পক্ষেত্রে ব্যপক উন্নয়ন । ৩. কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবে ।৪. দক্ষ জনগোষ্ঠী রপ্তানি করতে পারবো, ফলে অর্জিত হবে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক রেমিটেন্স।
৫. আর বাংলাদেশের মত একটি জনবহুল দেশ রূপান্তরিত হবে জনসম্পদে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ দাড়াবে বিশে^র বুকে মাথা উচু করে। তাই বলতে চাই বিশে^ যেখানে প্রতি মিনিটে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহন করছে সেখানে আমরা যদি সঠিক পরিকল্প না নিতে পারি তবে ব্যর্থ হবো এসডিজি সহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে। কিন্তু আমরা যদি সঠিক ভাবে এগোতে পারি তবেই পূরণ হবে এবারের জনসংখ্যা দিবসের প্রতিপাদ্য। যা ছিল ‘পরিবার পরিকল্পনা: জনগনের ক্ষমতায়ন জাতির উন্নয়ন’
লেখক : শিক্ষার্থী ও সাংষ্কৃতিক কর্মি, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়
অনফঁষধুরুৎঁ৩০৩@মসধরষ.পড়স