সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা বন্ধ হচ্ছে না ।। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই বন্ধ হওয়া চাই

আপডেট: ডিসেম্বর ২০, ২০১৬, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারের নতুন আইনে ইটভাটায় জ্বালানি ব্যবহার, চুল্লি ও অবস্থানের বিষয়ে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে, প্রায় ৯০ শতাংশ ভাটা ছয় মাসেও তা বাস্তবায়ন করেনি বলে উঠে এসেছে এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যে উঠে এসেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে, সারা দেশে সনাতন ও আধুনিক পদ্ধতির মোট ছয় হাজার ৬৩৭টি ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে মাত্র ৭৫৩টি নতুন আইনে বৈধভাবে ইট উৎপাদন করছে বলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ৬৩ শতাংশ কারখানা আধুনিক চুলার শর্ত ইতোমধ্যে পূরণ করেছে। যেগুলো বাকি আছে, সেগুলোও ধীরে ধীরে চলে আসবে বলে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।  যেসব ভাটা আইন বাস্তবায়ন করেছে, সেগুলোর মধ্যে ৬৩৭টি জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে, ৭৩টি হাইব্রিড হফম্যান পদ্ধতিতে এবং অন্যগুলো টানেল বা অন্যান্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ইট পোড়াচ্ছে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের অনেকে নতুন আইনের শর্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, পুরনো চিমনির বদলে আধুনিক চুলা চালু করা হলেও বাকি শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাদের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। এতে করে ১০ লাখ শ্রমিকের ইট উৎপাদন খাতে ‘অচলাবস্থা’ সৃষ্টি হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তারা।
এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর ১৭ দশমিক ২৪ বিলিয়ন পিস ইট উৎপাদন হয়, যার জন্য লাগে ৫৮ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন কাঁচামাটি।
সনাতন পদ্ধতির ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় কাঠ কিংবা কয়লা। ভাটার স্থায়ী চিমনির উচ্চতা হয় সর্বোচ্চ ১২০ ফুট। কাঁচামাটি ব্যবহার করে বছরে ছয় মাস (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) ইট উৎপাদন করা যায়। এসব স্থায়ী চিমনি দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়া ওজন স্তরের ক্ষতি করে; আশপাশের এলাকার পরিবেশও দূষিত করে তোলে।
পরিবেশবাদীদের দাবির মুখে সরকার ২০১৩ সালে ইটপ্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে, যেখানে স্থায়ী চিমনির ইটভাটা নিষিদ্ধ করা হয়।
নতুন আইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যেক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষি জমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেড এর মধ্যে ইটভাটা থাকতে পারবে না। এসব এলাকার দুই কিলোমিটার বাইরে ইটভাটা নির্মাণ করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেবল চুলা বদলালেই হচ্ছে না। নতুন আইনে ইটভাটার অবস্থানের বিষয়ে যে শর্ত দেয়া হয়েছে তাতে সনাতন পদ্ধতির ভাটাগুলো আধুনিক পদ্ধতির চুলা নিলেও আইনি বৈধতা পাচ্ছে না। আবার কাঁচামাল সহজলভ্যতার কারণেও অনেক মালিক সনাতন পদ্ধতি ছাড়ছেন না।
সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা যে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইটভাটার সমস্যা কেন্দ্র করে বিক্ষোভ সমাবেশ এমনকি প্রশাসনের কর্তব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার ঘটনাও আছে। ইটভাটা তৈরির ক্ষেত্রে যে অবস্থানের শর্ত আছে তাতে করে উত্তরাঞ্চলে ইটভাটা করার মত সুযোগ খুবই কম। তবুও ইটভাটার কোনো কমতি নেই। তবে এটাও ঠিক যে, দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইটের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। চাহিদামত ইট উৎপাদন করা সম্ভবও হচ্ছে না। ভাটায় উৎপাদিত ইটের বাইরেও বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার ইট আমদানি করতে হয় বলে জানা গেছে।
শর্ত শিথিল ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে কীভাবে সনাতন পদ্ধতি থেকে নতুন পদ্ধতির ইটভাটা প্রস্তুত করা যায়Ñ তেমনি একটি সমাধান খুঁজে বের করা দরকার। যাতে করে পরিবেশও রক্ষা হবে, আবার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সমস্যার সমাধান না করে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দড়ি টানাটানি অব্যাহত থাকলে আইনের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। পরিবেশ ক্ষতির মধ্যেই থাকবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ