বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ দেয় যে, কোনো দেশের সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশু জন্মদানের হার, যেন মোট জন্মহারের ১৫% এর বেশি না হয়। কিন্তু উদ্বোগের বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য বলছে, দেশে ২০১৮-১৯ সালে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ। যা উত্তোরত্তোর বাড়ছেই। আর ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিলো। রাজশাহীতেও গত এক বছরে স্বাভাবিক ডেলিভারিতে যতজন শিশুর জন্ম হয়েছে তার চেয়ে ৬ হাজার ৫১৩ জনেরও বেশি অস্ত্রপচারে শিশুর জন্ম হয়েছে। যা উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি নীতিগত সিদ্ধান্তও নেয়া প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের বিপরীতে সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানের ফলে নানা রকম ঝুঁকি রয়েছে। এটি মা ও শিশু উভয়কেই ঝুঁকিতে ফেলে। শিশুর জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় দীর্ঘ সময় লাগে। এছাড়া সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে।
যেমন, শিশু মায়ের প্রসবের পথ দিয়ে যদি স্বাভাবিকভাবে বের হয় তাহলে তার শরীর কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। অস্ত্রোপচারের ফলে এই ভালো ব্যাকটেরিয়া শিশু পায় না। এমন অনেক ভবিষ্য ঝুঁকি তৈরি হয় সিজারিয়ানে। এছাড়া সিজারিয়ানে যে বাড়তি খরচ হয়, তারও অবচয়ের সামিল।
সন্তান জন্মদানের এই প্রক্রিয়ায় একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বেশি সিজারিয়ানে সন্তান জন্ম দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে অস্ত্রপচারেও উৎসাহিত করা হয়। স্বাভাবিক ডেলিভারির চেয়ে সিজারিয়ানে বাচ্চা প্রসবে বাড়তি সুবিধা পায় ক্লিনিকগুলো।
রাজশাহীতে গত একবছরে তথ্য বলছে, রাজশাহী জেলায় ২০২২ সালে মোট ২২ হাজার ৮৪৯ শিশুর জন্ম হয়েছে। এরমধ্যে স্বাভাবিক প্রসব মাত্র ৮ হাজার ১৬৮। আর অস্ত্রপচারে ১৪ হাজার ৬৮১ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। আর সরকারি হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেয়া যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে অস্ত্রপচারে সন্তান প্রবসের হার এখানে কম। এটা থেকে স্পষ্ট বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ইচ্ছেমতো সিজারিয়ানে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে মা ও শিশু। আর এ বিষয়ে ডাক্তাররা যে উদাসীন তা তাদের বক্তব্যেও স্পষ্ট। তবে কিছু জায়গায় আধুনিকতার দোহায় দিয়ে মায়েরা নিজে থেকেই সিজারিয়ানে উৎসাহী হচ্ছেন। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ স্বাস্থ্য বিভাগকে নিতে হবে।