নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৮ দিন ধরে গ্রামে-গঞ্জে, শহর-নগরে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ, পাড়া-মহল্লায় মাইক বাজিয়ে কথায় কিংবা গানে গানে ভোটের প্রচার করা হয়েছিল। বিরামহীনভাবে ভোট প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যে সরগরম পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তারও অবসান হয়েছে। এখন অপেক্ষা কেবলই ভোটের বাক্সে ভোট দেয়ার। আবারো উৎসব, আবারো কোলাহল। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে। এরপর ভোট গণনা ও ফল ঘোষণার অপেক্ষা। ফল প্রকাশের আগমুহূর্তে নানা হিসাব-নিকেশ, জল্পনা-কল্পনা চলবেইÑ তার পরেই বিজয়ী প্রার্থীর কর্মি-সমর্থকদের বিজয়োল্লাস।
১৮ দিন ধরে ছিল নির্বাচনি প্রচারণার উত্তাপ। হালকা শীতেও প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে জমিয়েছেন ঘাম। প্রচারণা শেষে সব প্রার্থীই ছিলেন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে তা ভোট গণনার পর জানা যাবে কে হাসবেন শেষ হাসি।
তবে দ্বাদশ নির্বাচন নানা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের থাকবে নাকি সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদ সন্ত্রাসের অমানবিক বাংলাদেশ হবে। আজকের ভোটের রায়ের সাথে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের মর্যাদা ও গৌরব যা কিছু অর্জন তা নিয়ে বৈশ্বিকভাবে টিকে থাকার লড়াইও এই নির্বাচন। তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষের রায় ঘোষণার দিন আজ।
রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা হতে পারে রাতে। ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে যেমন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে তেমনি রয়েছে সহিংসতার শঙ্কাও। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ ও পছন্দের প্রার্থীদে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেক ভোটার। আর প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্যও দিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে।
রাজশাহীর ছয়টি আসনে প্রার্থী আছেন ৪২ জন। এর মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আরেক প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন এক প্রার্থী। ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৪১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে ভোটযুদ্ধে আছেন ১০ জন, রাজশাহী-২ আসনে সাতজন, রাজশাহী-৩ আসনে ছয়জন, রাজশাহী-৪ আসনে ছয়জন, রাজশাহী-৫ আসনে ছয়জন ও রাজশাহী-৬ আসনে আছেন ছয়জন প্রার্থী।
এর মধ্যে বিভিন্ন আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। রাজশাহী-১ আসনে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। তবে এই আসনে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢালিউডের চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা (মাহিয়া মাহি) ও আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়া। রাজশাহী-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ১৪ দলের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার। মূলত দুই বাদশার লড়াই দেখবে নগরবাসী। রাজশাহী-৩ আসনে লড়াই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের সাথে বিএনএম প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টুর। রাজশাহী-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুুল হকের। রাজশাহী-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের। রাজশাহী-৬ আসনে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহরিয়ার আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের মধ্যে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ জানান, শনিবার বেলা ১১টা থেকে সব কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে ব্যালট পেপার পাঠানো বাকি আছে। ভোট শুরুর আগে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। রোববার ভোর চারটার থেকে বিতরণ শুরুর কথা। ভোটগ্রহণ শুরুর আধাঘণ্টা আগে ব্যালেট কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে।
আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীর ছয়টি আসনে মোট ভোটার ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৭১৪। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭৭০টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার আছে ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩০ জন। নারী ভোটার আছে ১০ লাখ ৯২ হাজার ২৯৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ১৮ জন। ভোটকক্ষ আছে ৪ হাজার ৯৬৩টি। রাজশাহী ছয়টি আসনে মধ্যে ৯টি উপজেলা, ১৪টি পৌরসভা ও ৭২টি ইউনিয়ন আছে। এর মধ্যে রাজশাহী-২ আসনটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে।
রাজশাহী-১ আসনে ভোটকেন্দ্র আছে ১৫৮টি। ভোটকক্ষ আছে ৯৯৪টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ২১৮ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৩ ও নারী ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৫৬৪ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।
রাজশাহী-২ আসনে ভোটকেন্দ্র আছে ১১২টি। ভোটকক্ষ আছে ৮১৪টি। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৩ জন। পুরুষ ভোটার আছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪১৩ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৪ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছে ছয়জন।
রাজশাহী-৩ আসনে ভোটকেন্দ্র আছে ১২৮টি। ভোটকক্ষ আছে ৮৬৫টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৩৬ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ১৫৭ জন ও নারী ভোটার আছে ২ লাখ ৪৭৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন তিনজন।
রাজশাহী-৪ আসনে ভোটকেন্দ্র আছে ১২২টি। ভোটকক্ষ আছে ৭৪৭টি। মোট ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৫২ জন। পুরুষ ভোটার আছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৯ জন ও নারী ভোটার আছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন তিনজন।
রাজশাহী-৫ আসনে ভোটকক্ষ আছে ১৩২টি। ভোটকক্ষ আছে ৭৮১টি। মোট ভোটার আছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন। পুরুষ ভোটার আছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৩১ জন ও নারী ভোটার আছে ১ লাখ ৬৮ ৬৩ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছে চারজন।
রাজশাহী-৬ আসনে ভোটকেন্দ্র আছে ১১৮টি ও ভোটকক্ষ আছে ৭৬২টি। এই আসনে মোট ভোটার আছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার আছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫২৭ জন ও নারী ভোটার আছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন একজন।
ইসির ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামের অ্যাপে ভোটার নম্বর, কেন্দ্রের নাম ও অবস্থান, ভোট পড়ার হার, প্রার্থীদের হলফনামাসহ নির্বাচনের বিভিন্ন তুলনামূলক চিত্র ঘরে বসেই জেনে নিতে পারবেন আগ্রহীরা। দুই ঘণ্টা পরপর আসনভিত্তিক ভোট পড়ার হারও জানানো হবে সেখানে। অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল উভয় প্লে স্টোরে অ্যাপটি পাওয়া যাবে। অ্যাপটি ব্যবহার করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখ দিলেই মিলবে তথ্য। অ্যাপটি গত ১২ নভেম্বর উদ্বোধন করার পর এ পর্যন্ত এক লাখের বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে।