শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদের গ্রহণ-বর্জন!
চলতি মাসের ১ তারিখে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম-২০২২’-এর বাংলাদেশ অংশের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে জঙ্গি দমন অব্যাহত রাখায় ২০২২ সালে এ দেশে এ ধরনের অল্প কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিশেষত আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী, যেমন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং ইসলামিক স্টেটসংশ্লিষ্ট (আইএস) নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টারটেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ) এবং বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটকে (এটিইউ) এবং দেশজুড়ে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটকে নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের (এটিটি) বিচারক ও কৌঁসুলিদেরও প্রশিক্ষণ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নথিপত্র ব্যবস্থাপনা, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা, সন্ত্রাসীদের বিচার করা এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন-বিষয়ক মামলা পরিচালনার বিষয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ শুধু কঠোরভাবে জঙ্গি দমন করেই ক্ষান্ত হয়নি- দেশটির আরো সাফল্য আছে। অর্থপাচার বা মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে। বাসেল অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ইনডেক্স-২০২৩ রিপোর্টে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর এই ইনডেক্স প্রকাশ করা হয়। ২০২২ সালের তথ্যের ওপর এটি তৈরি করা হয়েছে। ২০২২ সালেও ২০২১ সালের তুলনায় ৮ ধাপ উন্নতি করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমনের সাফল্য স্বীকার করছেÑ কিন্তু অন্যভাবে সন্ত্রাসবাদের সমর্থকরূপেও ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে হস্তক্ষেপ তাতে সন্ত্রাসবাদীরাই উৎসাহিত হচ্ছে। আল-কায়েদা, আইএসের মতো বৈশ্বিক জঙ্গিগোষ্ঠী এবং জেএমবি, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয় ইত্যাদি জঙ্গিগোষ্ঠি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলাম এবং বিএনপিডর ক্ষেত্রে অন্যরকম। কিন্তু বাস্তবতা প্রথমটির সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ। যুক্তরােষ্ট্রের কাছে জামায়াতে ইসলামী মডার্ন ইসলামিক দল হিসেবে বিবেচ্য। এই ধারণা বাংলাদেশের মানুষের জন্য তামাসাই বটে।
অথচ জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুর ঘর বলা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল’ দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে বিএনপিকে কানাডার আদালত ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিএনপির বিগত দিনের জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের রাজনীতি সেই সাক্ষ্যই দেয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ওই দুই দলকেই আসন্ন নির্বাচন ইস্যুতে জোর সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই আচরণ সন্ত্রাসবাদ দমনের আকাক্সক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক। এই দ্বৈতনীতির কারণে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা যাবে নাÑ বরং সন্ত্রাসবাদকে জিইয়ে রাখারই কৌশল মাত্র।