সফল ই-৯ সম্মেলন : প্রতিষ্ঠার সুযোগ শিক্ষার গতিপথ

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০১৭, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

মো. আবুল হাসান, খন রঞ্জন রায়
৪৫ বছর আগে প্রায় রিক্তহস্তে যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অবকাঠামো, অভাব-অনটনে জর্জরিত সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ছিল পঙ্গু অর্থনীতি। ছিল না কোন সচল শিল্পকারখানা। রাজকোষ ছিল শূন্য। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ছিল শূন্যের ঘরে। সেই শূন্য থেকে সঠিক দিক নির্দেশনা আর মানুষের হাড়ভাঙ্গা শ্রমে আজ মহীরূহে রূপ পেয়েছে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশটির অর্থনীতি। স্বাধীনতার পর থেকে এপর্যন্ত আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ফলে দেশের বাজেটের আকার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সরকারি-বেবসরকারি বিনিয়োগ, রাজস্ব আয়, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণ, দারিদ্র নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো তৈরি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক সাফল্য।
মাত্র ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা অর্থনীতি নিয়ে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করলেও ৪৫ বছরে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বলতর সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। এখানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও বড় হয়েছে দেশের সব খাতই। প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বাংলাদেশের অর্থবিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২.১৭ ভাগ। আর ১৯৭২-৭২ সাল পর্যন্ত জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৭৫ শতাংশ। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত জিডিপি ছিল ৫.৯১ ভাগ। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ছিল ৪.০১ ভাগ, ১৯৯৬-৯৭ সালে ছিল ৪.৪৯ ভাগ। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৫ ভাগের উপরে যায়নি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপি ছিল ৬.৫৫ ভাগ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭.১১ ভাগ। পরবর্তী বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা গড়ে ৭.৪ ভাগ এবং ২০২০ সালে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বছরে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে শতকরা ৮ ভাগ এবং ২০৩০ সালে প্রবৃদ্ধি ৮.৫ ভাগ অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে ৪৩২ গুণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন। আর ৪৫ বছর পর প্রথম বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর যেখানে দেশের ৮৮ শতাংশ মানুষ ছিল দারিদ্রসীমার নিচে। ২০০৫ সালে দেশে দারিদ্রের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০১৫ সালে নেমে এসেছে ২৪.৮ শতাংশে। ২০১৬ সালে এর হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৩.২ শতাংশ। সেইসঙ্গে ব্যাপকহারে কমেছে অতিদারিদ্র্যের হারও। হিসাব অনুযায়ী, অতিদারিদ্র কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৯ শতাংশে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪৬২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এখন আর এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ৪৭ শতাংশে, এখন যা কমে সাড়ে ৫.৬১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
তিলে তিলে গড়ে ওঠা অর্থনীতির অবদান এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ চলছে। ৭ দশক ধরে ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার সফল আয়োজন এ জাতি বিশ্ব বিবেকের দরবারে নেতৃত্বের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষাবিষয়ক ‘এসডিজি-৪’ লক্ষ্য অর্জনের কার্যকর কৌশল নির্ধারণে ঢাকায় ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে ই-নাইনভুক্ত নয়টি দেশের শিক্ষামন্ত্রীরা অংশ নিয়েছেন। পারস্পরিক যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে ইউনেস্কোর সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া এবং দ্রুততার সঙ্গে সামষ্টিক সাফল্য অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ই-নাইন গঠিত হয়। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, চিন, মিসর, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দেনেশিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়া।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইউনেস্কোর ই-৯ ভুক্ত দেশগুলোকে চার ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনদিনব্যাপি সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা হারে পিছিয়ে থাকা জোটভুক্ত দেশগুলোকে সর্বোত্তম কর্মোদ্যোগ বিনিময়, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ণ অংশীদারিত্বের নতুন উপায় উদ্ভাবন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংলাপের যে তাগিদ দিয়েছেন তাতে সময়ের দাবিই ফুটে উঠেছে। শিক্ষার হারে পিছিয়ে থাকা এই ৯টি দেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ এই জোটভুক্ত দেশগুলোতে বাস করে। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ নিরক্ষর মানুষের বাসও এসব দেশে। দেশগুলোর সাধারণ শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্যসমূহ নিয়ে এ সংস্থাটি কাজ করছে।
ই-৯ ভুক্ত ৯ দেশের ভৌগোলিক অবস্থান পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, উপকূল, মরুভূমি, মেগাসিটি দিয়ে সীমানা ঘেরা। সপ্তম আশ্চর্যের ২টি ই-৯ দেশের অধিকারে। অন্য দিকে ই-৯ দেশসমূহে অধিবাসীদের ৪০ শতাংশ তরুণ বেকার জীবন যাপন করছে। সিংহভাগ জনগোষ্ঠী চরম দারিদ্র সীমায় বসবাস করছে। ই-৯ ভুক্ত দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো জরুরি বিষয়ের গুরুদায়িত্ব পড়েছে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাঁধে। তিনি মেধাকে কাজে লাগিয়ে ৯টি দেশের শিল্প, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতিকে হিমালয় চূড়ায় তুলে দিতে পারবেন।
ই-৯ বাসিন্দাদের দুর্গম, পাহাড়ি, উপকূলীয় এলাকায় গর্ভবতী মায়েরা প্রসূতি ও প্রসবকালীন পরিচর্যার সুযোগ পায় না। এখানে মা ও শিশু মৃত্যুর হার বিপদসীমার উপর। মিডওয়াইফ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফ ডিগ্রিধারীদের সেবা শ্র্রশ্রুষার মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব। সাগর, দ্বীপ উপকূলে প্রতিটি মানুষ প্রতিটি মুহুর্ত নদী ভাঙন, সুনামী, সাইক্লোন, ঝড় জলোচ্ছ্বাস, খরা, বন্যা মোকাবিলা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকে। একটু বিপর্যয় ঘটলে ঘর-বাড়ি, সহায় সম্পদ এমনকি আপনজনকে হারিয়ে ফেলে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে শহরের বস্তিতে আশ্রয়গ্রহণ করে।
উপকূলে মেরিন ইনস্টিটিউট, মেরিন ফিশারিজ ইনস্টিটিউট, খনিজ সম্পদ উত্তোলন, বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংস্থান ও লবণাক্ততা বিষয়ক ইনস্টিটিউট, নদীশাসন ও নিরাপত্তা শিক্ষার ইনস্টিটিউট, মেডিকেল স্কুল, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, ডেন্টাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। যদি তাই হয় তবে বহুমুখী ডিপ্লোমা ডিগ্রি বিষয়ক সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি এই সম্পদ আহরণ ও উত্তোলনে প্রভূত ভূমিকা পালন করতে পারবে। যে কোন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগে ও তৎকাল চিকিৎসা সেবা প্রদান ও আত্মরক্ষা বলয় তৈরি করতে পারবে।
ই-৯ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মরুভূমিতে এখনও সভ্যতার আলো পৌঁছেনি। তারা বনে-জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতে জীবনযাপন করেন। শিক্ষার আলো তাদের নিকট পৌঁছে নাই। নারী শিক্ষা দুরাশা। কথায় কথায় তারা মারামারি, হানাহানি, গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সম্মেলনে বক্তারা জানিয়েছেন সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং সশস্ত্র সংঘাত, মানবাধিকার, শান্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ই-৯ ভুক্ত দেশসমূহের খেলাধূলার ইনস্টিটিউট দুর্গম মরুভূমিতে ইনস্টিটিউট, পলিটেকনিক, লেদার, টেক্সটাইল, ফরেস্ট্রি, ভেটেরিনারি, পোল্ট্রি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় অর্থনৈতিক মূল ধারায় আসার পথ সুগম করতে পারে। পাশপাশি ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা অসামাজিক কর্মকা-ে থেকে বিরত থেকে সৃজনশীল কর্মকা- পরিচালনা করবেন। দুর্গম মরুভূমি থেকেও জাতীয় আন্তর্জাতিকমানের ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিককর্মী গড়ে উঠবে।
ই-৯ ভুক্ত আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারগুলোর অর্জন আশাব্যঞ্জক নয়। আদিবাসী ও অ-আদিবাসী মানুষের মধ্যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য রয়েছে এখনো। সম্প্রতি প্রকাশিত বৈষম্য হ্রাসবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। দেশগুলোর আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের ছয়-সাতটি উদ্যোগের ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি এখন পর্যন্ত। আদিবাসীরা ই-৯ ভুক্ত দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ। তারাই দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং শ্রম আয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বহু নাগরিক ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে সহায়তা করছেন এবং প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তারপরও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না। আদিবাসীদের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার কমানো, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান অর্জন আশাব্যঞ্জক নয়। আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে গবেষণা ও নীতি প্রণয়ে শিক্ষা গবেষণা ও কর্মমুখী শিক্ষার ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট নির্মাণ প্রয়োজন।
ই-৯ ভুক্ত দেশগুলোর রাজধানী ঢাকা, নয়াদিল্লি, ব্রাসিলিয়া, বেইজিং, কায়রো, জার্কাতা, মেক্সিকো সিটি, ইসলামাবাদসহ মেগাসিটিতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের প্রাণ যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৮-৯ লক্ষ লোক। তার সাথে পাল্লা দিয়ে জানমালের ক্ষতি হয়। নগরব্যবস্থাপনায় মোটাদাগের সমস্যাগুলোর মধ্যে বর্জ্যব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং। নগরীর নান্দনিক পরিবেশ বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা তো রয়েছে, সেসঙ্গে দূরদৃষ্টি ও সমন্বিত বর্জ্যব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রয়োজন। মেগাসিটির উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে ৪টি করে ড্রাইভিং ও ক্লিনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা (অপমৃত্যু) এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে উঠবে। ই-৯ ভুক্ত সবগুলো দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পারমাণবিক চুল্লি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে। পারমাণবিক চুল্লিগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তায় ডিপ্লোমা ইন এর্নাজি প্রযুক্তিবিদদের ভূমিকা সর্বাগ্রে।
ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন ডিপ্লোমা শিক্ষা বোর্ড। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী বৃদ্ধি ও অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন করার জন্য ‘বিশ্ব ডিপ্লোমা শিক্ষা দিবস’ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ই-৯ এর চেয়ারপারসন মনোনীত হয়েছে। আগামী দুই বছর বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী এর চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তার নেতৃত্বে দেশসমূহের শিক্ষাব্যবস্থার অসঙ্গতি দূর সম্ভব হবে। দেশসমূহে উচ্চ শিক্ষিত বেকার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ও তা সমাজে অস্থিরতার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের (সিডার) কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার পর্যালোচনা-২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনে উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধির যে তথ্য তুলে ধরার হয়েছে তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে আশনি সংকেত বলে বিবেচিত হওয়ার মতো তথ্যটি হলো আমাদের দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণই নিষ্ক্রিয়। যারা কর্ম বাজারে নেই, শিক্ষায়ও নেই, প্রশিক্ষণেও নেই।
দেশে ১৫-২৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ। এর মধ্যে ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ বা ১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার তরুণের কোনো ধরনের শ্রম, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নেই। বেকার লোকদের মধ্যে অনেকের মেধা আছে। বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ার কারণে নিজের উপযুক্ততা প্রমাণে ব্যর্থ হয়। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় চাকরির বাজার ও সম্ভাবনাময় খাতের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থান নীতিমালার লক্ষ্যগত সমন্বয় থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে সেক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থা দৃশ্যমান। বাজারে একদিকে খাতভিত্তিক দক্ষ জনবলের ঘাটতি, অন্যদিকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমাদের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ৮ বছর ধরে বাংলাদেশে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১ কোটি ৮০ লক্ষ ৫০ হাজার শিক্ষিত তরুণের বেকারত্বের দায়ভার সম্পূর্ণভাবে তার কাঁধে বর্তায়। এরই মধ্যে ই-৯ সদস্য দেশগুলোর সভাপতির দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। জনাব নাহিদের কর্মতৎপরতার ও সৃষ্টিশীল শিক্ষা পরিকল্পনা ই-৯ সঙ্গে নিয়ে বিশ্ব দরবারে আরও একবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখবে। আমরা ১৬ কোটি আম-জনতা নাহিদের নিকট এমনটি আশা করছি।
উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে ভারাক্রান্ত হবে না বিশ্ব স্বীকৃত ডিপ্লোমা শিক্ষায় সমৃদ্ধ হবে এ কঠোর বাস্তবতাকে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ এখন আমাদের নাগালে। কঠোর কঠিন বাস্তবতাময় সঠিক নির্দেশনায় ই-৯ ভুক্ত দেশসমূহসহ বাংলাদেশ তারুণ্য নির্ভর কর্মকেন্দ্রীক ডিপ্লোমা শিক্ষার গতিপথ খুঁজে পাবে। এ প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
লেখক: সভাপতি ও মহাসচিব, ডিপ্লোমা শিক্ষা গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ।
কযধহধৎধহলধহৎড়ু@মসধরষ.পড়স