শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
রাজধানীতে শেষ হয়েছে তিন দিনব্যাপী সবজি মেলা, যাতে সবজি চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মডেল ধারণা প্রদর্শিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো রাজধানীর ফার্মগেইটের খামার বাড়ি প্রাঙ্গনে বৃহস্পতিবার শুরু এই মেলার সমাপনী দিন ছিল শনিবার।
সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে যা দেখা যায় তাতে যে কারও মনে হতে পারে- শতরংয়ের বাহারি সজ্জা কেবল ফুল নয়, সবজি দিয়েও সম্ভব হতে পারে।
মেলা প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে রং-বেরংয়ের সবজি দিয়ে; সঙ্গে সারা দেশ থেকে আসা ৪৪টি সরকারি বেসরকারি সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের সবজির পসরা সাজিয়েছে মেলায়। এসবরের মধ্যে দেশি জাতের বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন বিদেশি সবজিও, যার অনেকগুলোরই ভালো উৎপাদন এখন দেশেই হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সবজি কেবল প্রদর্শনীর জন্য রাখলেও বেসরকারি ব্যক্তিমালিকাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টলে কিনতে পাওয়া গেছে টাটকা সবজি। সবজি চাষে ২১টি নতুন প্রযুক্তির মডেল প্রদর্শন করা হয়েছে মেলায়। মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুরের চারপাশে সবজি চাষের একটি মডেলের নাম দেওয়া হয়েছে এগ্রো ফিসারিজ। এমনই আরও রয়েছে কলসি পদ্ধতিতে সবজি চাষ, ঘেরের পারে সবজি চাষ, বিনাচাষে আলু উৎপাদনসহ নানা রকম নতুন পদ্ধতিতে সবজি চাষের উপায়। মেলায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাসায় অল্প পরিসরে সবজি বাগান করার বেশ কয়েকটি পদ্ধতি। মগবাজার থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এই মেলায় এসেছেন আয়েশা নামের এক চিকিৎসক। তার কাছে যার কাছেও বাসায় সবজি চাষের পদ্ধতিগুলো ভালো লেগেছে। তিনি বলেন, “সবজি বাগান যে বাসায় করা সম্ভব, তা দেখে ভালো লাগছে। আমিও চেষ্টা করব ছাদে বাগান করার। এখানে এসেছিলাম মেয়েকে নানা রকম সবজি দেখাতে, আমিও অনেক কিছু শিখে গেলাম।” মেলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আয়োজক কমিটির সদস্য সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট (আইএফএমসি) প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, সবজির উৎপাদন, পুষ্টিমান বজায় রেখে রপ্তানি বা ব্যবসা ইত্যাদি বিষয়কে এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশেই এই মেলার আয়োজন। “তাছাড়া নগরীর মানুষকে বাসার সামনে খোলা জায়গা, ছাদ, বারান্দাসহ অল্প জায়গায় সবজি চাষ করার নানা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেও সরকার এই মেলার উদ্যোগ নিয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে পুষ্টিমান রক্ষায় দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করাও এই মেলার উদ্দেশ্য।” বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করার ইচ্ছা থেকে এ সম্পর্কিত নতুন ধারণা পেতে মহাখালি ডিওএইচএস থেকে সবজি মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ী প্রদীপ দে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে এসে খুব উপকার হল। আমার প্রজেক্টের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পরামর্শ নিচ্ছি, তারা বলেছে উৎপাদন ভালো করার জন্য সব সহযোগিতা করবে।” সবজি মেলার এই আয়োজনকে সময় উপযোগী মন্তব্য করে এ ধরনের আয়োজন ‘বছরে দুই তিনবার হলে ভালো হয়’ বলেও ভাষ্য এই ব্যবসায়ীর। এ ধরনের মেলায় বিক্রির ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত নন এগ্রোল্যান্ড ইন্টেগ্রেটেড ফার্মের মালিক এ কিউ এম ফিরোজুল হক, যার স্টলে সবজি প্রদর্শনীর পাশাপাশি সেগুলো মোটামুটি বিক্রি হতেও দেখা যায়। ফিরোজুল হক বলেন, “আসলে ব্যবসার পরিচিতি বাড়ানো, নগরের মানুষকে ফার্মে উৎপাদিত সবজির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেই মূলত মেলায় অংশ নিয়েছি। এই আয়োজন আমাদের এবং ক্রেতাদের উভয়ের জন্য লাভজনক।” কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করেছে এই মেলার। শনিবারের সমাপনী অনুষ্ঠানে সবজি উৎপাদনে কৃতিত্বের জন্য জেলা ও কৃষক পর্যায়ে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিডিনিউজ